মাগুরা পৌরসভা নির্বাচনে মাঠে শুধু নৌকার প্রার্থী

আওয়ামী লীগ প্রার্থী অর্ধশত পথসভা করেছেন। কিন্তু প্রকাশ্যে কোনো সভা করতে পারেননি বিএনপির প্রার্থী।

নির্বাচন কমিশন

ঢাকঢোল পিটিয়ে, নেতা-কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী। একই দিনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন বিএনপির প্রার্থী। তিনি এসেছিলেন একেবারেই দলবল ছাড়া। দলের পদধারী কোনো নেতা তাঁর সঙ্গে ছিলেন না। একই রকম অবস্থা ছিল ইসলামী আন্দোলন–সমর্থিত প্রার্থীর। এ পরিস্থিতি মাগুরা পৌরসভা নির্বাচনের।

মনোনয়নপত্র দাখিলের তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। দ্বিতীয় ধাপে ১৬ জানুয়ারি জেলার একমাত্র পৌরসভায় ভোট গ্রহণ। তবে এত দিনেও প্রচারণার পরিস্থিতি বদলায়নি। ভোটের মাঠে একদিকে উৎসবের আমেজ, অন্যদিকে আতঙ্ক। আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রতিদিন একাধিক পথসভা-উঠান বৈঠক করছেন। এদিকে এখনো দলবল নিয়ে প্রকাশ্য প্রচারে দেখা যাচ্ছে না অন্য দুই দলের প্রার্থীকে।

এখানে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন বর্তমান মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খুরশীদ হায়দার (টুটুল)। তাঁর পক্ষে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। ব্যানার, পোস্টার থেকে শুরু করে প্রচারণার সব কৌশলেই এগিয়ে রয়েছে নৌকা।

আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার জ্যেষ্ঠ নেতাদের নেতৃত্বে ওয়ার্ডভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটি হয়েছে। প্রতিদিন নেতা-কর্মী মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নৌকার জন্য ভোট চাইছেন। প্রতিদিন তিন–চারটি করে মোট অর্ধশত পথসভা, মতবিনিময় সভা করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তা ছাড়া স্থানীয় সাংসদও পুরো বিষয়টি নেপথ্যে থেকে নজরদারি করছেন। নির্বাচনের মাঠে এগিয়ে থাকলেও প্রচারণায় ঢিল বা প্রতিপক্ষকে ছাড় দিতে চান না তাঁরা।

ভিন্ন চিত্র বিরোধী শিবিরে। ধানের শীষের প্রার্থী হলেন সাবেক মেয়র জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইকবাল আখতার খান (কাফুর)। দৃশ্যমান প্রচারণা দেখা যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ প্রার্থী যেখানে অর্ধশত পথসভা করেছেন, সেখানে প্রকাশ্যে একটিও সভা করতে পারেননি বিএনপির প্রার্থী। দল বেঁধে ভোট চাইতেও দেখা যাচ্ছে না ধানের শীষের কর্মীদের।

বিএনপির নেতারা বলছেন, নির্বাচনের আগমুহূর্তে মাঠে সক্রিয় অর্ধশতাধিক নেতা–কর্মীর নামে দুটি ‘মিথ্যা’ মামলা দিয়ে আগেই তাঁদের মাঠছাড়া করা হয়েছে। প্রকাশ্যে মাঠে নামার সাহস কেউ দেখাচ্ছেন না।

বিএনপির প্রার্থী ইকবাল আখতার খান বলেন, ‘নেতা–কর্মীদের হামলা–মামলাসহ নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। এমন বৈরী পরিস্থিতিতেও ভোটাররা ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে আমরা জিতব।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খুরশীদ হায়দার বলেন, ‘উনি (ইকবাল আখতার) পালাবার পথ খুঁজছেন। দলের নেতা–কর্মীদের কাছেই অতিথি পাখি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। কেবল নির্বাচন এলেই তাঁর দেখা মেলে। এই নির্বাচনে তাঁর দলের অনেক নেতা আমার পক্ষে কাজ করছেন। ফলে কাউকে হুমকি দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’

মেয়র পদের আরেক প্রার্থী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মসিউর রহমানের প্রচারণাও তেমন নেই। এ বিষয়ে মসিউর রহমান মুঠোফোনে বলেন, ‘প্রকাশ্যে কাজ করতে গেলে কিছু জায়গায় বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন আমাদের কর্মীরা। তবে আমাদের কাজ চলছে। কিছুটা কৌশল অবলম্বন করে কাজ করছি আমরা।’

সভা-সমাবেশের অনুমতি নেওয়া হচ্ছে না

পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার মতবিনিময় সভার আয়োজন করে মাগুরা জেলা পরিবেশক সমিতি ও ব্যবসায়ী সমিতি। শহরের সৈয়দ আতর আলী সড়কে (সদর থানা চত্বরের ৫০ মিটার দূরত্বের মধ্যে) রাস্তার একটি অংশ দখল করে তৈরি করা হয় মঞ্চ। সন্ধ্যায় হওয়া ওই সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রার্থী খুরশীদ হায়দার। শনিবার সন্ধ্যায় একই রকমভাবে শহরের জুতা ব্যবসায়ীদের মতবিনিময় করেন এই প্রার্থী। সেখানেও সভার জন্যও মঞ্চ তৈরি করা হয় জুতাপট্টির রাস্তা দখল করে।

এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদিন মুঠোফোনে বলেন, গত শনিবার পর্যন্ত কোনো প্রার্থী সভা করার বিষয়ে থানা থেকে অনুমতি নেননি।