মাগুরায় মাইক ব্যবহারে পুলিশের বাধা, সংঘর্ষে পণ্ড বিএনপির সমাবেশ

সমাবেশে মাইক ব্যবহারে বাধা দেওয়ার পর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে বিএনপির। রোববার দুপুরে মাগুরা শহরের ইসলামপুর পাড়ায় জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

মাগুরায় জেলা বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রোববার দুপুর ১২টার দিকে মাগুরা শহরের ইসলামপুর পাড়া জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে পুলিশ মাইক ব্যবহারে বাধা দিলে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় এক সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন বিএনপির চার নেতা–কর্মী।

বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যের সময় পুলিশ মাইকের তার ছিঁড়ে ফেললে নেতা–কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হন। পুলিশের দাবি, কোনো সংঘর্ষ হয়নি। সমাবেশে মাইক ব্যবহারের অনুমতি না থাকায় তাতে বাধা দেওয়ায় বিএনপি নেতারা রাগ করে চলে গেছেন।

বিএনপি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদে সারা দেশে কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশ ছিল শনিবার। ওই দিন মাগুরায় জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ায় বিএনপির কর্মসূচি এক দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়। শনিবার রাতে প্রশাসনের কাছ থেকে সমাবেশের অনুমতিও নেওয়া হয়। আজ রোববার জেলা বিএনপির এই কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক। বেলা ১১টার দিকে মিছিল নিয়ে দলে দলে সমাবেশস্থলে আসেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। সাড়ে ১১টার দিকে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়।

প্রথম দিকে স্থানীয় নেতারা হ্যান্ডমাইকে বক্তব্য দেন। বিরোধের শুরু হয় প্রধান অতিথি জয়নুল আবদিনের বক্তব্যের সময়। রিকশায় বাঁধা একটি মাইকে তিনি বক্তব্য শুরু করলে প্রথমে পুলিশের কয়েকজন সদস্য মাইকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে দলীয় কর্মীরা আবারও মাইকের সংযোগ দিলে বক্তব্য শুরু করেন প্রধান অতিথি। দ্বিতীয় দফায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য মঞ্চের কাছে গিয়ে মাইকের তার ধরে টান দেন। এমন পরিস্থিতিতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন নেতা–কর্মীরা। শুরু হয় চেয়ার–ছোড়াছুড়ি ও সংঘর্ষ। এরপর পণ্ড হয়ে যায় সমাবেশ। বক্তব্য না দিয়েই মঞ্চ ত্যাগ করেন জয়নুল আবদিন ফারুক।

বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন নেতা–কর্মীরা। শুরু হয় চেয়ার–ছোড়াছুড়ি ও সংঘর্ষ। এরপর পণ্ড হয়ে যায় সমাবেশ। রোববার দুপুরে মাগুরা শহরের ইসলামপুর পাড়ায়
ছবি: প্রথম আলো

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আকতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের হামলায় জেলা যুবদল সভাপতি ওয়াসিকুর রহমান কল্লোল, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ, পৌর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মহসিন আলী ও সদর থানা যুবদলের সদস্যসচিব সাকিব মাহমুদ আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ওয়াসিকুর রহমান কল্লোলের মাথায় আঘাত গুরুতর। তাঁকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আজকের পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ফয়সাল পারভেজ আহত হয়েছেন।

সাংবাদিক ফয়সাল পারভেজ বলেন, ‘কাঁটাতারে ঘেরা বিএনপির কার্যালয়ে সংঘর্ষ শুরুর পর আমরা কয়েকজন সাংবাদিক দুই পক্ষের মাঝে পড়ে যাই। পরিস্থিতি বিপজ্জনক হতে পারত। তবে অল্পতে রক্ষা পেয়েছি।’

প্রথম দিকে স্থানীয় নেতারা হ্যান্ডমাইকে বক্তব্য দেন। বিরোধের শুরু হয় প্রধান অতিথি জয়নুল আবদিনের বক্তব্যের সময়।
ছবি: প্রথম আলো

বিএনপির নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই আজকের সমাবেশ শুরু হয়। তবে সমাবেশ শুরুর আগেই পুলিশ সেখান থেকে মাইক খুলে নিয়ে যায়। আমার বক্তব্যের সময় শুধু একটা মাইক চালু ছিল। এ সময় পুলিশ অতর্কিত হামলা চালিয়ে সমাবেশ পণ্ড করে দেয়। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং এ ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত, তদন্ত করে তাঁদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাই।’

বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, সমাবেশে হামলার পর ভায়নার মোড় এলাকা থেকে জেলা ছাত্রদল সভাপতিসহ চার নেতা–কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আটক ব্যক্তিরা হলেন জেলা ছাত্রদল সভাপতি আবদুর রহিম, মহম্মদপুর উপজেলার রাকিব শেখ, মামুন খান ও শহরের মুচিপাড়া এলাকার বাসিন্দা লুৎফর রহমান।

মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, নাশকতার উদ্দেশ্যে জড়ো হওয়ার অভিযোগে চারজনকে ভায়নার মোড় এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সমাবেশে সংঘর্ষের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সংঘর্ষ হয়নি। আবাসিক এলাকায় সমাবেশে মাইক ব্যবহারের অনুমতি ছিল না। তাই পুলিশ মাইক ব্যবহারে বাধা দিলে বিএনপি নেতারা রাগ করে চলে যান।’