মাগুরায় সংখ্যালঘুদের কাছে উড়োচিঠি

মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার চরগোয়ালদহ ও মালাইনগর গ্রামে প্রায় অর্ধশত সংখ্যালঘু পরিবারের কাছে উড়োচিঠি পাঠিয়েছে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা। শুক্রবার রাতে পরিচয় গোপন রেখে কয়েকজন ওই চিঠিগুলো বিতরণ করে। শনিবারই ওই এলাকা পরিদর্শন করে স্থানীয় লোকজনের উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহ্বান জানান স্থানীয় সাংসদ ও পুলিশ।

চর মালাইনগর গ্রামের দীপ্ত বালা বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পর হেলমেট পরা কয়েকজন মোটরসাইকেল নিয়ে এলাকায় আসে। পাঞ্জাবি পরা এসব ব্যক্তি বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাড়ির কর্তাদের নামে খামে ভরা ওই চিঠিগুলো বাড়ির সদস্যদের হাতে তুলে দেয়। এরপর মোটরসাইকেলেই তারা এলাকা থেকে চলে যায়। চর মালাইনগর ও চর গোয়ালদহ গ্রামে প্রায় অর্ধশত বাড়িতে একই ধরনের চিঠি দেওয়া হয়। এসব চিঠিতে ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।

চিঠি পাওয়া ব্যক্তিদের একজন চর গোয়ালদহ গ্রামের নির্মল সরকার। তিনি রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন আমরা এই এলাকায় হিন্দু–মুসলিম একসঙ্গে বসবাস করছি। এর আগে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রথমে কিছুটা উদ্বেগ সবার মধ্যে কাজ করেছে। কিন্তু গতকাল এমপি সাহেব, পুলিশ এসে আমাদের আশ্বস্ত করেছে। স্থানীয় সবাই আমাদের পাশে আছে বলে জানিয়েছে।’

ঘটনার পর শনিবার রাতে ওই এলাকা পরিদর্শন করেন মাগুরা–১ আসনের সাংসদ সাইফুজ্জামান। গোয়ালদহ এলাকায় একটি সমাবেশে অংশ নিয়ে স্থানীয় লোকজনের উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের পাঁয়তারা যারা করছে, তাদেরকে হুঁশিয়ার করেন সাংসদ।

এদিকে এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানা–পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কি না, তা জানতে একটি আদেশ দিয়েছেন মাগুরার একটি আদালত। রোববার বিকেলে শ্রীপুর আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবা শারমীন ওই আদেশ দেন।

আদালত সূত্র জানায়, বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবর দেখে বিষয়টি বিচারকের নজরে আসে। এ পরিস্থিতিতে শ্রীপুরের এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন আদালত। ২৩ মার্চের মধ্যে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আহমদ মাসুদ জানান, ‘ঘটনা শোনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। রোববার বিকেল পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি বা কাউকে আটক করা হয়নি। তবে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।