মাটি খুঁড়ে মা-বাবা ও ছেলের লাশ উদ্ধার

প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় স্বামী–স্ত্রী ও তাঁদের সন্তানকে হত্যা করে নিজ ঘরের পেছনে মাটি চাপা দেওয়া হয়। পরে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে মাটি খুঁড়ে তাঁদের লাশ উদ্ধার করে।
হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিরা হলেন আসাদ মিয়া (৪৫), তাঁর স্ত্রী পারভিন আক্তার (৪২) ও তাঁদের সাত বছরের সন্তান মো. লিয়ন। তাঁরা উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের জামশাইট গ্রামের কান্দাপাড়ার বাসিন্দা।
এ ঘটনায় আসাদের ছোট ভাই দ্বীন ইসলাম (৪২), মা জুমেলা খাতুন (৬২) ও বোন নাজমা বেগমকে (৩০) আটক করা হয়েছে।
পুলিশের দাবি, জমিসংক্রান্ত ঘটনার জের ধরে দ্বীন ইসলামের হাতে তাঁরা খুন হন।
পুলিশ ও এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আসাদ কান্দাপাড়ার মীর হোসেনের ছেলে। তাঁর বাবা বেঁচে নেই। পেশাগত কারণে আসাদ দীর্ঘদিন ঢাকায় থেকেছেন। কয়েক বছর আগে গ্রামে ফিরে আসেন এবং নিজ এলাকায় একটি প্লাস্টিক পণ্যের দোকান দেন। তাঁর তিন ছেলেসন্তান। বড় সন্তান তোফাজ্জল মিয়া (১৮) ঢাকায় থাকেন। মেজ ছেলে মোফাজ্জল মিয়া (১৬) বাবার সঙ্গে দোকানে সহযোগিতা করে।

কয়েক বছর ধরে দ্বীন ইসলামের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিরোধ। সম্প্রতি এই বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নেয় এবং মারমুখী পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে। দ্বীন ইসলাম স্থানীয়ভাবে মাদকসেবী হিসেবে পরিচিত। থানায় তাঁর বিরুদ্ধে মাদক আইনে একটি মামলাও রয়েছে। বুধবার নাশতা খেয়ে আসাদ ও মোফাজ্জল দোকানে যান। রাতে দোকানে দুজনের একজন পালা করে থাকেন। বুধবার রাতে দোকানে থাকে মোফাজ্জল। আসাদ বাড়ি চলে আসেন। বৃহস্পতিবার সকালে দোকান থেকে বাড়ি এসে পরিবারের কাউকে ঘরে দেখতে পায়নি মোফাজ্জল। ঘরের মধ্যে রক্তের ছাপ চোখে পড়ে তার। বিষয়টি ধারণা করতে পেরে দৌড়ে যায় পুলিশের কাছে। পুলিশ এসে বাড়ির পেছনে সামান্য মাটি খুঁড়তেই লাশ তিনটি চোখে পড়ে। লাশ উদ্ধারের সময় দ্বীন ইসলাম কাছে ছিলেন না। পরে পুলিশ গ্রাম থেকেই দ্বীন ইসলামকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। তাঁর সঙ্গে মা ও বোনকেও নেওয়া হয়।
মোফাজ্জল বলে, সম্পত্তি নিয়ে চাচা দ্বীন ইসলামের সঙ্গে বিরোধ চলছিল। চাচার চাওয়ামতো সব সম্পত্তি বুঝিয়ে দেওয়া না হলে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলেন। এ অবস্থায় ঘরে এসে তাঁদের না পেয়ে এবং রক্তের ছাপ দেখতে পেয়ে বুঝতে আর অসুবিধা হয়নি।

তবে দ্বীন ইসলামের মা ও বোন হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে পুলিশকে জানান।
কটিয়াদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল বলেন, দ্বীন ইসলাম আমাদের কাছে সহজেই হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। আপাতত জানা গেছে বুধবার রাতে দ্বীন ইসলাম একাই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। ঘুমন্ত তিনজনকে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়। পরে ঘরের পেছনে মাটি খুঁড়ে তাঁদের চাপা দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আর কেউ ছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।