মাটিরাঙ্গা নামেই শুধু পৌরসভা

খাগড়াছড়ি
খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভা গঠিত হয়েছিল দীর্ঘ ১৭ বছর আগে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পৌরবাসীর উন্নয়নের আশা পূরণ হয়নি। ন্যূনতম নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিতই রয়ে গেছেন তাঁরা। নামে পৌরসভা হলেও এখানকার বেশির ভাগ সড়কই কাঁচা ও ভাঙাচোরা। নেই ফুটপাত, সড়কবাতি, নালা-নর্দমা, ময়লা ফেলার স্থান। অনেক এলাকায় নেই বিদ্যুৎ–সংযোগ ও সুপেয় পানির সুবিধাটুকুও। 

মাটিরাঙ্গা পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর। পরে ২০১১ সালের ৩১ মে তা পৌরসভার গ শ্রেণি থেকে খ শ্রেণিভুক্ত হয়। পৌরসভাটির ওয়ার্ড সংখ্যা নয়টি। ২৫.৫০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ পৌরসভার বাসিন্দা ৩৫ হাজারের বেশি। এখানে সরকারি প্রতিষ্ঠান ৩৩টি, আবাসিক স্থাপনা ৪৬৯৪টি ও বাণিজ্যিক স্থাপনা ১০৯৮টি। কিন্তু বাজার রয়েছে একটি, কসাইখানা একটি ও গণশৌচাগারও একটি। পৌর কর্তৃপক্ষ নিয়মিতভাবেই এগুলো থেকে কর আদায় করে থাকে। গত বছর গৃহকর আদায় করা হয়েছিল ১৭ লাখ ৩২ হাজার ৮৪৩ টাকা। 

পৌরসভা তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার পরও কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন না পাওয়ায় হতাশ পৌরবাসী। তাঁদেরই একজন মাটিরাঙ্গা বাজার এলাকার ব্যবসায়ী মো. মালেক হোসেন। তিনি বলেন, এলাকায় ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকে ময়লা–আর্বজনা। নেই কোনো ডাস্টবিন। দুর্গন্ধে টেকা দায়। পৌরসভা হওয়ার পর ভেবেছিলেন উন্নয়ন হবে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার পর সাত বছর পেরিয়ে গেছে। পৌরসভা থেকে দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হলো না। ভবিষ্যতে আদৌ হবে কি না, সন্দেহ আছে। 

পৌরসভা সূত্র জানায়, পৌরসভা এলাকায় সড়ক আছে ১১৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে পাকা রাস্তা ১৫ কিলোমিটার, আধা পাকা ৬৫ কিলোমিটার ও কাঁচা রাস্তা ৩৫ কিলোমিটার। এ ছাড়া পাকা ড্রেন রয়েছে ২ কিলোমিটারের, আধা পাকা ৬ কিলোমিটারের। পৌরসভায় এখন পর্যন্ত ৪৬০টি সড়কবাতি লাগানো হয়েছে।

সম্প্রতি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের টিঅ্যান্ডটি টিলা, বলিটিলা, কালিমন্দিরপাড়া, চৌধুরীপাড়া, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বড়ঝালাসহ বিভিন্ন এলাকা, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভূঁইয়া এলাকার রাস্তা কাঁচা। যেগুলো ইটের তৈরি সেগুলোরও কিছু কিছু স্থানে ইট নেই। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এলাকাবাসীর যাতায়াতে ধলিয়া খালের ওপর নেই সেতু। ১ নম্বর ওয়ার্ডে নেই বিদ্যুতের সংযোগ।

৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দীন মোহন ত্রিপুরা বলেন, ‘আমাদের এলাকায় কোনো সড়ক নেই, ছড়ার পাড় দিয়ে যেতে হয়। এ ছাড়া ধলিয়া খালে সাঁকো নেই। বর্ষায় গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে বিপদে পড়তে হয়। সড়কবাতি না থাকায় সন্ধ্যার পর চারদিক ছেয়ে যায় ঘুটঘুটে অন্ধকারে। পৌরসভার কোনো সেবা পাচ্ছি না, অথচ প্রতিবছর ঠিকই পৌর কর পরিশোধ করতে হয়।’ 

১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. এমরান হোসেন বলেন, ‘আমার ওয়ার্ড এখনো বিদ্যুতের আওতায় আসেনি। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে জনপ্রতিনিধি হয়েও এলাকার লোকজনের কাছ থেকে প্রায় সময় কথা শুনতে হয়।’ 

পৌরবাসীর অভিযোগ স্বীকার করে পৌরসভার মেয়র মো. শামছুল হক বলেন, ‘প্রতিবছর বর্ষায় রাস্তাগুলো খারাপ হয়। তারপরও আমি নির্বাচিত হওয়ার পর কিছু এলাকায় রাস্তায় কার্পেটিং করেছি এবং ইট বিছিয়েছি। ক্রমান্বয়ে সব রাস্তার সংস্কারকাজ করা হবে।’

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কাউন্সিলর বলেন, কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করে মেয়র ধীরে ধীরে উন্নয়নকাজ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি নিজের ইচ্ছেমতো পৌরসভা পরিচালনা করেন। যে এলাকায় নালা ও সড়কের প্রয়োজন নেই সেখানে নালা ও সড়ক তৈরি করেন। এলাকাবাসীর মন রক্ষার্থে অনেক কাউন্সিলর নিজের খরচে সড়কে সড়কবাতি লাগিয়ে দেন। পর্যাপ্ত সেবা দিতে না পারায় তাঁরা এলাকাবাসীর কাছ থেকে কথা শোনেন। 

এ প্রসঙ্গে পৌর মেয়র বলেন, ‘অন্য পৌরসভার চেয়ে এই পৌরসভা অনেক বড়। যে কারণে একদিকে কাজ করলে অন্যদিকে কাজ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। যে প্রকল্পগুলো পৌরসভার জন্য আসে তা দিয়ে সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তা ছাড়া ৩৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে ১৪ লাখ টাকা করও বাকি আছে—যা কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন না হওয়ার আরেক কারণ। তিনি আরও বলেন, যেখানে কর্মচারীদের বেতন বাকি ১১ মাসের, সেখানে উন্নয়ন করব কীভাবে? তারপরও কিছু কিছু এলাকার উন্নয়ন হচ্ছে।’

মাটিরাঙ্গা উপজেলার ইউএনও বিভীষন কান্তি দাশ বলেন, ‘গত বছর কিছু পৌর কর পরিশোধ করা হয়েছে। বর্তমানে উপজেলা প্রশাসনের তহবিল থেকে অর্থ দেওয়ার সামর্থ্য নেই। তাই পৌরসভার বকেয়া বিলের জন্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছি।’