ধরমপাশায় মাতৃত্ব ভাতা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

সরকারি নির্দেশনা না মেনে তিন ও চার সন্তানের মায়েরাও মাতৃত্ব ভাতা পাচ্ছেন। অথচ দুই সন্তানের বেশি থাকলে কোনো নারী মাতৃত্ব ভাতার সুবিধা পাবেন না।

সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলায় সরকারি নির্দেশনা না মেনে তিন ও চার সন্তানের মায়েরাও মাতৃত্ব ভাতা পাচ্ছেন। অথচ দুই সন্তানের বেশি থাকলে কোনো নারী মাতৃত্ব ভাতার সুবিধা পাবেন না। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাঁদের নাম তালিকায় উঠিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে এ অনিয়ম হয়েছে। উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাতৃত্ব ভাতার মেয়াদ তিন বছর। প্রত্যেক ভাতাভোগী প্রতি মাসে ৮০০ টাকা করে পান। উপজেলার বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের ১৪৭ জন মাতৃত্ব ভাতার সুবিধাভোগী রয়েছেন। ওই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ১৩ জন এই ভাতা পাচ্ছেন।

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা পাশের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, প্রথম অথবা দ্বিতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে জীবনে মাত্র একবার দুস্থ–দরিদ্র নারীরা মাতৃত্ব ভাতার সুবিধা ভোগ করবেন। দুই সন্তানের অধিক কোনো সন্তানের মা এই ভাতা পেয়ে থাকলে এটি সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। এমন কিছু হয়ে থাকলে সেটির জন্য ইউনিয়ন কমিটিই দায়ী।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান বলেন, তদন্ত করে এ ব্যাপারে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দুই সন্তানের অধিক সন্তানের মা এই ভাতা পেয়ে থাকলে এটি সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। এমন কিছু হয়ে থাকলে সেটির জন্য ইউনিয়ন কমিটিই দায়ী।
জাহাঙ্গীর হোসেন, উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব)

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ভাতাভোগীদের মধ্যে ওই ওয়ার্ডের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের রোখশানা আক্তারের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে, বংশীকুণ্ডা গ্রামের কলি বেগমের তিন ছেলে ও এক মেয়ে এবং দক্ষিণউড়া গ্রামের কুসুমা নামের এক নারীর দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। দুইয়ের বেশি সন্তান থাকলেও ওই তিনজন নারী গত বছরের জুলাই থেকে শুরু করে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত তাঁদের নামে বরাদ্দ আসা মাতৃত্ব ভাতার টাকা উত্তোলন করেছেন।

ওই ইউনিয়নের সুবিধাবঞ্চিত কয়েকজন নারী বলেন, এই ভাতা পেতে হলে ইউপির চেয়ারম্যান আজিম মাহমুদকে জনপ্রতি তিন থেকে চার হাজার টাকা দিতে হয়। যাঁরা টাকা দেন, তাঁদের সন্তান বেশি হলেও এই ভাতা পেতে কোনো সমস্যা হয় না।

বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, মাতৃত্ব ভাতা পাওয়া রোখশানা, কলি বেগম আর কুসুমার নাম তিনি দেননি। এই নামগুলো চেয়ারম্যান দিয়েছেন। তিনি সম্প্রতি বিষয়টি জেনেছেন।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান আজিম মাহমুদ বলেন, ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যই এই নামগুলো দিয়েছেন। তিনি এ বাবদ কারও কাছ থেকে টাকা নেননি। দুই সন্তানের বেশি মায়েরা এই ভাতা পেয়ে থাকলে তাঁদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।