মাদকমুক্ত এলাকা চান ভোটাররা

১৩, ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ড

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তত্পরতা সত্ত্বেও এই তিন ওয়ার্ডে মাদক কেনাবেচা বন্ধ হচ্ছে না। প্রায়ই ঘটে সহিংস ঘটনা।

কুমিল্লা নগরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের থিরা পুকুরপাড়, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর এবং ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাটাবিল ও কাঁসারিপট্টি এলাকায় নিয়মিত মাদকদ্রব্যের কেনাবেচা চলে। এসব এলাকায় যেমন মাদকসেবী আছেন, তেমনি অন্য এলাকা থেকেও মাদকসেবীরা এখানে জড়ো হন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তত্পরতা সত্ত্বেও এই তিন ওয়ার্ডে মাদক কেনাবেচা বন্ধ হচ্ছে না। এসব ওয়ার্ডে রয়েছে জলাবদ্ধতা। প্রায়ই ঘটে সহিংস ঘটনা। ভোটাররা বলছেন, আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠেয় কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। এ নির্বাচনে সমস্যা সমাধানে যাঁদের আন্তরিক বলে মনে হবে, তাঁদেরই ভোট দেবেন তাঁরা।

নগরের দক্ষিণ চর্থা ও থিরা পুকুরপাড় এলাকা নিয়ে ১৩ নম্বর ওয়ার্ড। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, প্রতিদিন বিকেল ও সন্ধ্যার পর উঠতি বয়সী অনেক তরুণ মোটরসাইকেল নিয়ে থিরা পুকুরপাড় এলাকায় আসেন। এরপর মাদকদ্রব্য সেবন করে চলে যান। ফেনসিডিল, গাঁজা ও ইয়াবা সেবনে এসব তরুণ বিপথগামী হচ্ছেন। এ ওয়ার্ডের ঢুলিপাড়া সড়কের উত্তর পাশেও মাদকসেবীরা রয়েছেন।

থিরা পুকুরপাড় মাদকবিরোধী কমিটির আহ্বায়ক ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘একসময় এ এলাকায় মাদকের ছড়াছড়ি ছিল। এখন কমে এসেছে। আমরা চেষ্টা করছি নিয়ন্ত্রণের জন্য।’

এই ওয়ার্ডের দক্ষিণ চর্থা পশ্চিম অংশে জলাবদ্ধতা বেশি। কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের দক্ষিণ পাশের সড়ক থেকে ইপিজেড পর্যন্ত সড়কে সামান্য বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। স্থানীয় বাসিন্দা কাউছার আহমেদ বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলে সড়ক ও বাসাবাড়িতে পানি ঢোকে। এসব সমস্যার সমাধান চান এলাকাবাসী।

১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটারসংখ্যা ১২ হাজার ২৭৭। বর্তমান কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত উল্লাহ, কুমিল্লা মহানগর যুবলীগের সদস্য মো. কাউসার খন্দকার ও রাজিউর রহমান এবং কুমিল্লা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সদস্য নূরে আলম কাউন্সিলর প্রার্থী। শাখাওয়াত উল্লাহ বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। কারাগার থেকে তিনি নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন তাঁর ভাই মোতাহের হোসেন।

কুমিল্লা নগরের হাউজিং এস্টেট ও দ্বিতীয় মুরাদপুর এলাকা নিয়ে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড। হাউজিং এস্টেট এলাকা জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের অধীন। কিন্তু এখানকার ভোটাররা সিটি করপোরেশন এলাকার এই ওয়ার্ডের ভোটার। হাউজিং এস্টেট এলাকার বেশির ভাগ সড়ক খানাখন্দে ভরা। রয়েছে জলাবদ্ধতাও।

১৪ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর এলাকায় মাদকের বিস্তার থাকায় মাঝেমধ্যেই সহিংস ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। এ ওয়ার্ডের বাসিন্দা এ বি এম খোরশেদ আলম বলেন, এখানকার জলাবদ্ধতা নিরসনে আন্তরিক হতে হবে জনপ্রতিনিধিদের।

১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটারসংখ্যা ৮ হাজার ৫৮৫। এ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী টানা দুবারের কাউন্সিলর বিএনপি নেতা মো. সেলিম খান এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ হাসেম।

কুমিল্লা নগরের কাটাবিল, চকবাজার বালুধুম, কাঁসারিপট্টি, পুরাতন মৌলভীপাড়া, মৌলভীপাড়া বজ্রপুর এলাকা নিয়ে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের কাটাবিল বস্তি এলাকা ঘিরে মাদকদ্রব্য কেনাবেচা হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

কাঁসারিপট্টি এলাকায় শিক্ষিত মানুষের হার কম। এলাকায় ঘিঞ্জি পরিবেশ। কাটাবিল এলাকা ও বজ্রপুরে মাদকদ্রব্যের ব্যবসা ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রায়ই মারামারির ঘটনা ঘটে। কয়েক মাস আগে মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই যুবক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘জাগ্রত মানবিকতা’র সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

ওয়ার্ডের কাটাবিল গদার মা কলোনিতে সামান্য বৃষ্টি হলে পানি জমে। এখানকার নালার ব্যবস্থা ভালো নয়। জনস্বাস্থ্যও হুমকির মুখে। নিরাপদ পানির অভাব রয়েছে।

গত সোমবার কাটাবিল এলাকা ঘুরে অন্তত ১৫ জনের সঙ্গে কথা হয়। এর মধ্যে ১২ জনই মাদকদ্রব্যের বিস্তার নিয়ে উদ্বিগ্ন। তিনজন এলাকা সন্ত্রাসমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয় অন্তত দুজন গণমাধ্যমকর্মী বলেন, কাটাবিল ও মৌলভীপাড়া এলাকায় কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী আছেন। এখানে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও পুলিশের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে মাদক ব্যবসা চলে। এর বিরুদ্ধে এলাকায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই মাদকের বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না।

মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. রোকন উদ্দিন বলেন, এলাকায় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী তত্পরতা ও মাদকদ্রব্যের কেনাবেচা চলে। এসব ঠেকাতে প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে এবং জয়ী ব্যক্তিকে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটারসংখ্যা ৭ হাজার ৯৩। এ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী সাইফুল বিন জলিল, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য শাহজাহান সিরাজী ও শফিক আহম্মেদ মজুমদার।