মাদকের টাকার জন্য শ্বশুরবাড়ি গিয়ে চারজনকে কুপিয়ে জখম

গ্রেপ্তার যুবক স্বপন মিয়া

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মাদকের টাকার জন্য এক যুবক শ্বশুরবাড়ি গিয়ে স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্ত্রীর বড় বোনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে উপজেলার মহেড়া ইউনিয়নের স্বল্প মহেড়া গ্রামের তালুকদারপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ এ ঘটনায় স্বপন মিয়া (২৫) নামের ওই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তার স্বপন মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কী ইউনিয়নের গোড়ান গ্রামের আতোয়ার রহমানের ছেলে। আহত ব্যক্তিরা হলেন স্বপনের স্ত্রী শিলা আক্তার (১৯), শিলার বাবা (স্বপনের শ্বশুর) সিরাজুল ইসলাম (৬০), মা সূর্যভানু বেগম (৫৫) ও বোন রাজিয়া আক্তার (২৫)। মুমূর্ষু অবস্থায় আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য প্রথমে টাঙ্গাইলে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, প্রায় দুই মাস আগে স্বপন মিয়ার সঙ্গে শিলা আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর শিলা জানতে পারেন, তাঁর স্বামী মাদকাসক্ত। তিনি এর আগেও বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের কিছুদিন পর তিনি প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেন। বিষয়টি গোপন রেখে স্বপন তাঁকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বিয়ের কিছু দিন পরই স্বপন নেশার টাকা জোগাড় করতে শিলাকে তাঁর বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে চাপ দেন। এ নিয়ে তাঁদের দুজনের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হতো। প্রায় এক মাস আগে শিলাকে শারীরিক নির্যাতন করলে তিনি বাবার বাড়ি চলে যান। এরপরও স্বপন তাঁকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। বুধবার শিলা বিষয়টি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকেও জানান।

স্বপন এর আগে বিয়ের পর স্ত্রীকে তালাক দেন। পরে তাঁর প্রথম স্ত্রীর করা মামলায় তিনি জেল খাটেন। ওই মামলায় তিনি জামিনে মুক্তি পান।

বৃহস্পতিবার স্বপন স্বল্প মহেড়া গ্রামে তাঁর শ্বশুরবাড়ি গিয়ে স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে টাকা দাবি করেন। এতে অস্বীকৃতি জানালে স্বপন তাঁদের ওপর ক্ষিপ্ত হন। একপর্যায়ে তিনি ঘরের দরজা আটকিয়ে আগে থেকেই তাঁর কাছে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলাপাতাড়ি কুপিয়ে তাঁদের গুরুতর জখম করেন। এ সময় ঘরে থাকা রাজিয়া আক্তারের তিন বছরের মেয়ে তায়েবা ভয়ে চিৎকার করতে থাকে। এ ছাড়া আহত ব্যক্তিদের আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। তাঁরা ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করেন। এ সময় তাঁরা স্বপনকে আটক করে পিটুনি দেন। খবর পেয়ে পুলিশ তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
আহত সিরাজুল ইসলামের শ্যালক (শিলার মামা) জিয়াউর রহমান জানান, আহত ব্যক্তিদের অবস্থা ভালো নয়। স্বপন তাঁর শ্বশুরবাড়িতে কত টাকা দাবি করেছিলেন, তা তিনি জানাতে পারেননি।

স্থানীয় মহেড়া ইউপি চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া জানান, স্বপন মাদকাসক্ত। মূলত মাদকের টাকার জন্য তিনি তাঁর স্ত্রী ও স্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন।

মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সায়েদুর রহমান জানান, স্বপন এর আগে বিয়ের পর স্ত্রীকে তালাক দেন। পরে তাঁর প্রথম স্ত্রীর করা মামলায় তিনি জেল খাটেন। ওই মামলায় তিনি জামিনে মুক্তি পান। গত বৃহস্পতিবারের ঘটনায় সিরাজুল ইসলামের মেয়ে শিল্পী বেগম বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় মামলা করেছেন। ওই মামলায় স্বপনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার টাঙ্গাইলের আদালতে পাঠানো হবে।