মাদারীপুরে পরাজিত প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে হামলা, আহত ২৫

পরাজিত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের রাজারহাট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া, খোয়াজপুর ও মস্তফাপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে বিজয়ী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তিনটি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে এসব ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২৮ নভেম্বর মাদারীপুর সদর উপজেলার ১৪টি ইউপিতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের দিন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে সোমবার সন্ধ্যায় কেন্দুয়া ইউনিয়নের বিজয়ী চেয়ারম্যান মো. রায়হান ফকিরের সমর্থকদের সঙ্গে পরাজিত প্রার্থী সাগর মিয়ার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। কেন্দুয়া ইউনিয়নের তালতলা এলাকায় সোমবার রাত ১০টা পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় অন্তত ১০টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৫ জন। আহত ব্যক্তিদের মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১১৯ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করেছে পুলিশ। সংঘর্ষ এড়াতে কেন্দুয়া এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পরাজিত প্রার্থী সাগর মিয়া বলেন, ‘রায়হান তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমার লোকদের ওপর হামলা করেছে। বাড়িঘরে ভাঙচুর-লুটপাট থেকে শুরু করে সব তছনছ করে দিয়েছে। আমাদের লোকদের এলাকা ছাড়তে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। আমাকে ভোট দেওয়ায় ভোটারদের মারধর করা হচ্ছে। পুলিশ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’

অভিযোগের বিষয় মো. রায়হান ফকির বলেন, ‘সাগর পরাজয় সইতে না পেরে তার লোকজন দিয়ে আমার লোকজনের ওপর হামলা করেছে। আমরা ওদের হামলা প্রতিরোধ করেছি মাত্র। আমাদের পক্ষ থেকে কোনো হামলা চালানো হয়নি। বোমা বিস্ফোরণ থেকে শুরু করে বাড়িঘরে ভাঙচুর সবই সাগরের লোকজন করেছে। পুলিশ তাদের চিহ্নিত করে থানায় নিয়ে গেছে।’

এদিকে মঙ্গলবার সকালে খোয়াজপুর ইউনিয়নের রাজারহাট এলাকায় পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আলী মুন্সির কর্মী-সমর্থকদের দুটি বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে বিজয়ী প্রার্থী জয়নাল আবেদীন মোল্লার সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এ সময় রিপন তালুকদারের বাড়ি থেকে ১৫টি গৃহপালিত ছাগল নিয়ে যায় হামলাকারীরা। হামলায় মো. আলী মুন্সির পাঁচজন সমর্থক আহত হয়েছেন।

হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত রিপন তালুকদার বলেন, ‘আমরা কারও লোক না। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিছি। এরপরও হামলাকারীরা ঘোড়া মার্কার স্লোগান নিয়ে এসে আমাদের বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। বাধা দিতে গেলে ওরা আমাকে মারধর করে। আমরা গৃহপালিত ১৫টি ছাগলও নিয়ে গেছে হামলাকারীরা। আমি এর বিচার চাই।’

হামলার বিষয় খোয়াজপুর ইউপিতে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে বিজয়ী চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন মোল্লা বলেন, ‘এখানে অপ্রীতিকর ঘটনা কেন ঘটবে। আমি বিপুল ভোটে পাস করেছি। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। আমার কোনো নেতা-কর্মী কারও ওপর হামলা চালায়নি। তবে শুনেছি, রাজারহাট এলাকার আবদুল খালেক খান ও কামাল নামের দুই মেম্বার প্রার্থীর মধ্যে বিরোধের জেরে দুটি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। এখানে আমি দায়ী না।’

এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় মস্তফাপুর ইউনিয়নের চাপাতলী এলাকায় সংরক্ষিত নারী সদস্যপদে জয়ী হাসিয়া বেগমের এক সমর্থকের বাড়িতে পরাজিত সুফিয়া বেগমের লোকজনের হামলার অভিযোগ পাওয়া যায়। হাসিয়ার সমর্থক আনোয়ার মাতুব্বরের অভিযোগ, সুফিয়ার সমর্থকেরা তাঁর বাড়িঘর ভাঙচুর করে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে গেছেন। হামলায় আহত হয়েছেন তাঁর স্ত্রীসহ পরিবারের পাঁচ সদস্য।
মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হাসান মিঞা প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দুয়ায় বিজয়ী ও পরাজিত দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে দফায় দাফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে ১১৯ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করেছে। ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের কেউ এখন পর্যন্ত মামলা করতে আসেনি।