মাদারীপুরে বোমা বানানোর সময় বিস্ফোরণ, আহত ২
মাদারীপুরের কালকিনিতে বোমা বানাতে গিয়ে একটি ঘরে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ঘরটির বেড়া ও টিনের চালা উড়ে গেছে। এতে আহত হয়েছেন বোমা তৈরির দুই কারিগর। তাঁদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত একটার দিকে উপজেলার দক্ষিণ মাথাভাঙ্গা মোহম্মদনগর এলাকার মোনাই মোল্লার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
আহত দুজন হলেন মাথাভাঙ্গা এলাকার নুরাই ব্যাপারীর ছেলে ইয়ামিন ব্যাপারী (৪০) ও দক্ষিণকান্দি এলাকার মৌজালী শিকদারের ছেলে সুমন শিকদার (৩৫)। সুমন সিডিখান ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান চান মিয়া শিকদারের চাচাতো ভাই। আর ইয়ামিন সিডিখান ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য শ্যামলী আক্তারের স্বামী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মোনাই মোল্লার একটি টিনশেড ঘরে বসে হাতবোমা বানানোর কাজ করছিলেন ইয়ামিন, সুমনসহ কয়েক যুবক। তাঁদের বানানো একটি বোমা ঘরের মধ্যে হঠাৎ বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে স্থানীয় লোকজন কালকিনি থানার পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ বিধ্বস্ত ঘর থেকে ইয়ামিন ও সুমনকে উদ্ধার করে প্রথমে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে তাঁদের পাঠানো হয় বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এ ব্যাপারে চান মিয়া শিকদার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ঢাকায় আছি। এলাকায় বিস্ফোরণের সংবাদ পেয়েছি। তবে কীভাবে এ ঘটনা ঘটল, তা আমি কিছুই জানি না।’ চাচাতো ভাই বিস্ফোরণে আহত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সুমন বা কারা বিস্ফোরণে আহত আছেন, তা আমি এখনো জানি না। জেনে বিস্তারিত বলতে পারব।’
সিডিখান এলাকার কয়েকজনের দাবি, এর আগেও একাধিকবার এই এলাকায় হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের লোকজন হাতবোমা বানানোর কাজ করছিলেন।
কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইশতিয়াক আশফাক আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘খবর শুনে আমরা ওই বাড়িতে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি, বোমা বিস্ফোরণে ঘরটির চালা ও বেড়ার কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরটির চারপাশে বোমা তৈরিতে ব্যবহৃত কাচের টুকরা, বারুদ ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে। বিস্ফোরণের পর বোমা তৈরিতে গুরুতর আহত ব্যক্তিরা ওই ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁরা একটি নৌকা নিয়ে বাড়ির পাশের একটি বিল ধরে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। পরে পুলিশ বিল থেকে ইয়ামিন ও সুমনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।’
ওসি আরও বলেন, ‘সামনে ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান চাঁন মিয়া শিকদারের সঙ্গে প্রতিপক্ষ চেয়ারম্যান প্রার্থী মিলন মিয়ার বিরোধ চলছিল। যাঁরা বোমা তৈরি করতে গিয়ে আহত হন, তাঁরা ইউপি চেয়ারম্যান চাঁন মিয়া শিকদারের লোক বলে আমরা জেনেছি। মূলত নির্বাচন ঘিরে আধিপত্য বিস্তারের জন্যই চাঁন মিয়ার গ্রুপ এই বোমা তৈরির কাজ করছিল। এ ঘটনায় মামলা হবে।’
কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তানভীর আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাতে বোমা বিস্ফোরণে রক্তাক্ত দুজনকে হাসপাতালে আনা হয়। তাঁদের বুক, পিঠ, মুখসহ শরীরে বিভিন্ন অংশে মারাত্মক জখমের চিহ্ন আছে। দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।’