মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাতক্ষীরায় দুজন গ্রেপ্তার

গ্রেপ্তার
প্রতীকী ছবি

সাতক্ষীরায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আশাশুনি উপজেলার গুড়গুড়ি ও চাপড়া এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে আজ সকালে তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন আবুল হাসেম সরদার (৭৫) ও মুজিবর রহমান সরদার (৭৬)। হাসেম আশাশুনির চাপড়া গ্রামের তাহের আলী সরদারের ছেলে। আর মুজিবর একই গ্রামের সদর উদ্দিনের ছেলে।

সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, আবুল হাসেম সরদারকে আশাশুনি উপজেলার পাইথালী এলাকার একটি মাছের ঘের থেকে ও মুজিবর রহমান সরদারকে তাঁর বাড়ি চাপড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষকে অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দুটি মামলা রয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের ডাকা অধিবেশন ১ মার্চ হঠাৎ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এরই প্রতিবাদে ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ বেলা দুইটা পর্যন্ত সারা দেশে হরতালের ডাক দেওয়া হয়। সাতক্ষীরায় হরতাল পালনকালে ছাত্র-জনতা এক হয়ে মিছিল বের করেন। সাতক্ষীরার পাকাপোল মোড় হয়ে চাপড়া লজ নামের বাড়ির সামনে গেলে মিছিলটির ওপর ওই বাড়ির ছাদ থেকে আবুল হাসেম সরদারসহ তাঁর তিন ভাই গুলি চালান। গুলিতে শহীদ হন রিকশাচালক আবদুর রাজ্জাক। এ সময় আরও ১৫-১৬ জন গুলিবিদ্ধ হন। পরে শহরের চিলড্রেন পার্কে শহীদ আবদুর রাজ্জাককে দাফন করা হয়। পাশাপাশি চিলড্রেন পার্কের নাম পরিবর্তন করে শহীদ আবদুর রাজ্জাক পার্ক করা হয়। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে আশাশুনির শোভনালি ইউনিয়নের সরাপপুর গ্রামের গোরা ঠাকুর দাশ, মেঘনাথ দাস, কৃষ্ণপদ দাস ও তারাপদ দাসকে চাপড়া গ্রামের মুজিবর রহমান সরদারের নেতৃত্বে বাড়ি থেকে অপহরণ করে ব্যাপক নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যা করা হয়।

এ ঘটনায় আশাশুনি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন সানা বাদী হয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা করেন। মামলায় রাজাকার কমান্ডার লিয়াকত সরদার, আবুল হাসেম সরদার ও একই এলাকার মুজিবর রহমান সরদারকে আসামি করা হয়। তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ মামলাটি ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেন।

রাজাকার কমান্ডার লিয়াকত সরদার দুই মাস আগে মারা যাওয়ায় আবুল হাসেম সরদার ও মুজিবর রহমান সরদারের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। আজ ওই প্রতিবেদন শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষ দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাইলে ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন মঞ্জুর করেন। পরোয়ানা জারিসংক্রান্ত আদেশ সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারকে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা বলেন, আবুল হাসেম সরদার ও মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা রয়েছে। আজ সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেওয়ার পর দুপুরে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।