মানববন্ধনের খবর সংগ্রহে গিয়ে সাংসদ সমর্থকদের হামলার শিকার সাংবাদিক

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে মানববন্ধন কর্মসূচির সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে তারেক রহমান নামের এক সাংবাদিক স্থানীয় সাংসদের সমর্থকদের হামলার শিকার হয়েছেন। আজ সোমবার দুপুরে শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সামনে স্থানীয় সাংসদ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১) সামিল উদ্দিন আহমেদের সমর্থকেরা এই হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সাংবাদিক তারেক রহমান দৈনিক মানবজমিন পত্রিকা ও মোহনা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি। তিনি শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।

তারেক রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা নদীর পাঁকা ফেরিঘাটের অতিরিক্ত টোল আদায়ের প্রতিবাদে সোমবার উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধনের প্রস্তুতি চলছিল। এ সময় সাংসদ সামিল উদ্দিন আহমেদের ব্যক্তিগত সহকারী মো. সোহেলের নেতৃত্বে ১৫-১৬ জন যুবক একটি মাইক্রোবাস থেকে লাঠিসোঁটা ও রড নিয়ে মানববন্ধনকারীদের ওপর হামলা করতে যায়। তিনি মুঠোফোনে এর চিত্র ধারণ করতে গেলে সাংসদের সমর্থকেরা তাঁর ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা তাঁর মাথা লক্ষ্য করে রড দিয়ে আঘাত করলে তিনি হাত দিয়ে তা প্রতিহত করেন। এরপর তাঁর পায়েও আঘাত করে এবং মুঠোফোনটি কেড়ে নেয়।

সাংসদের ব্যক্তিগত সহকারী মো. সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, ফেরিঘাটের টোলের বিষয়ের সঙ্গে সাংসদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। কিন্তু সাংসদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করতে গেলে তাঁদের সমর্থকেরা উত্তেজিত হয়ে মানববন্ধনের আয়োজকদের ধাওয়া করেন। একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি হয়। ওই জটলার মধ্য থেকে তিনি তারেক রহমানকে উদ্ধার করেন। তাঁকে মারধরের ঘটনা সঠিক নয়।

সাংসদ সামিল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ফেরিঘাটের টোলের সঙ্গে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকার পরও একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করছিল। এতে তাঁর সমর্থকেরা বাধা দেয়। মানববন্ধনকারীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হয়েছে কেবল। এ সময় সাংবাদিক তারেক রহমান হাতে সামান্য আঘাত পান। তাঁর মুঠোফোনটি কেড়ে নেওয়া হয়। পরে তিনি সেই মুঠোফোন উদ্ধার করে সাংবাদিককে ফেরত দিয়েছেন এবং ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন।

এদিকে পাঁকা এলাকার কদমতলী গ্রামের রুহুল আমিন, মতিউর রহমান, মো. মন্টু অভিযোগ করেন, পাঁকা ফেরিঘাটের ইজারাদার সাংসদ সামিল উদ্দিন আহমেদের ঘনিষ্ঠ লোক জামাল উদ্দিন দীর্ঘদিন থেকে অতিরিক্ত টোল আদায় করে আসছে। জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে আবেদন করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। তাই সোমবার দুপুরে উপজেলা রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কর্মসূচির প্রস্তুতির সময় সাংসদের লোকজন হামলা চালায়। এতে তাঁদের দুজন আহত হয়েছেন।

এ ব্যাপারে ফেরিঘাটের ইজারাদার জামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ফেরিঘাটে ইউএনও অফিস কর্তৃক টানানো টোল–সংক্রান্ত তালিকায় উল্লিখিত দর অনুযায়ী টোল আদায় করা হয়। কিন্তু কিছু লোক সেই দরেরও কম টোল দিতে চায়। তারাই এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।

শিবগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনাম উল্লাহ বলেন, ফেরিঘাটের টোল নিয়ে মানববন্ধনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় একদল লোক সেখানে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। এ সময় পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। মারামারির কোনো ঘটনা ঘটেনি। সাংবাদিক তারেক রহমান হয়তো অন্যদিকে নিগৃহীত হয়ে থাকতে পারেন। তিনি সেটা দেখেননি। তিনিও থানায় কোনো অভিযোগ করেননি।