মানিকগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, দুর্ভোগে লাখ মানুষ

মানিকগঞ্জে অভ্যন্তরীণ নদীগুলোতে অস্বাভাবিকভাবে পানি বাড়ছে। এতে ঘরে পানি ওঠায় মালামাল নিয়ে অন্যত্র যাচ্ছে একটি পরিবার। মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলার নতুন বসতি গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো।
মানিকগঞ্জে অভ্যন্তরীণ নদীগুলোতে অস্বাভাবিকভাবে পানি বাড়ছে। এতে ঘরে পানি ওঠায় মালামাল নিয়ে অন্যত্র যাচ্ছে একটি পরিবার। মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলার নতুন বসতি গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো।

মানিকগঞ্জে পদ্মা ও যমুনা নদীর পানি সামান্য কমেছে। তবে জেলার অভ্যন্তরীণ নদীগুলোতে পানি বাড়তে থাকায় সদর, ঘিওর ও সাটুরিয়া উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় এসব উপজেলার মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মানিকগঞ্জ কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার দৌলতপুর ও শিবালয় উপজেলায় যমুনা নদীতে গতকাল সোমবার সকালে যমুনা নদীর পানি স্থিতিশীল অবস্থায় ছিল। দুপুরের পর থেকে এই নদীতে পানি কিছুটা কমতে শুরু করে। মঙ্গলবার বেলা তিনটায় শিবালয়ের আরিচা পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই পরিস্থিতি হরিরামপুর উপজেলার পদ্মা নদীতে। এ উপজেলার আন্ধারমানিক এলাকায় পদ্মার পানি গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৩ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

যমুনা ও পদ্মায় পানি কিছুটা কমলেও বেড়েছে জেলার অভ্যন্তরীণ কালীগঙ্গা ও ধলেশ্বরীর পানি। নদী দুটি যমুনার শাখা। সদর ও ঘিওর উপজেলার মধ্য দিয়ে ধলেশ্বরী ও কালীগঙ্গা এবং সাটুরিয়ার মধ্য দিয়ে ধলেশ্বরী নদী বয়ে গেছে। উজানে যমুনা নদী থেকে আসা ঢল এবং বৃষ্টির কারণে শাখানদী দুটির পানি বেড়েছে।

পাউবো সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বেলা তিনটায় সদর উপজেলার তরা এলাকায় কালীগঙ্গা নদীর পানি ২৪ ঘণ্টায় ৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ ছাড়া একই সময়ে সদরের জাগীর পয়েন্টে ধলেশ্বরীর পানি ২৪ ঘণ্টায় ৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অভ্যন্তরীণ দুটি নদীতে পানি বাড়ায় সদর উপজেলার দীঘি, নবগ্রাম, পুটাইল, ভাড়ারিয়া, জাগীর, কৃষ্ণপুর, বেতিলা-মিতরা ও আটিগ্রাম ইউনিয়নে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া ঘিওরের বরটিয়া, পয়লা, সিংজুরী, বানিয়াজুরী, বালিয়াখোড় ও ঘিওর সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার কয়েক শ বসতভিটা পানিতে তলিয়ে গেছে।

কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যমুনা ও পদ্মায় পানি কমলেও দৌলতপুর, হরিরামপুর ও শিবালয়ে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এসব উপজেলার নদীতীরবর্তী এলাকা ও চরাঞ্চলের বন্যাকবলিত। ২০ জুলাই থেকে সদর, ঘিওর ও সাটুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। বাড়িঘরে পানি ওঠায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে এসব এলাকার তিন লক্ষাধিক মানুষ। তবে জেলার সিঙ্গাইর উপজেলায় এখনো বন্যা দেখা দেয়নি।

সরেজমিন দেখা গেছে, পানি বাড়ায় মঙ্গলবার সদর উপজেলার দীঘি ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামে অনেকের ঘরে পানি ঢুকেছে। এই পরিস্থিতিতে অনেকে মাচা তৈরি করে সেখানে রান্নাবান্নার কাজ করছেন। কেউ কেউ বাড়িঘর তালা দিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।

বাড়িতে পানি ওঠায় গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে শত শত পরিবার। দীঘি গ্রামের রমজান আলী বাড়িতে পানি ওঠায় গ্রামের একটি সেতুর ওপর তিনি তিনটি গরু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। রমজান আলী বলেন, ‘মাটি দিয়া উঁচু কইর‌্যা গরু রাখতে ভিটি বানাইছিলাম। পানিতে তা–ও ডুবে গ্যাছে। উপায় নাই, ব্রিজে গরু নিয়া উঠছি।’

বসতবাড়িতে পানি ওঠায় গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছে অনেক মানুষ। এক ব্যক্তি সেতুর ওপর গরু বেঁধে রেখে খাবার খাওয়াচ্ছেন। মঙ্গলবার মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার দীঘি গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো
বসতবাড়িতে পানি ওঠায় গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছে অনেক মানুষ। এক ব্যক্তি সেতুর ওপর গরু বেঁধে রেখে খাবার খাওয়াচ্ছেন। মঙ্গলবার মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার দীঘি গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত জেলার ৩১৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলায় প্রায় ৬০ হাজার পরিবারের দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৮৪৭টি পরিবার ও ১ হাজার ১৮০টি গবাদিপশু আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া বন্যার্তদের জন্য ১৯৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ পর্যন্ত দুর্গতদের মধ্যে ২৬০ মেট্রিক টন চাল, ৩ লাখ ৫০ হাজা টাকা, ৩ হাজার ৩০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় ১ লাখ ৭ হাজার ৮৫৩টি পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ কার্যক্রম চালু রয়েছে।

জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস বলেন, উজান থেকে আসা পানি এবং বৃষ্টির কারণে জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে শুকনা খাবার, খাদ্যসহায়তা, অর্থ, শিশু ও গোখাদ্যের জন্য অর্থ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।