মানিকগঞ্জে বিচারক-সংকটে মামলার জট

মানিকগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজের পদ প্রায় দেড় মাস এবং দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজের (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২–এর বিচারক) পদ এক বছরের বেশি সময় ধরে শূন্য। এ ছাড়া এক বছরের বেশি সময় ধরে শূন্য রয়েছে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৫–এর বিচারকের পদটিও।
জেলা ও দায়রা জজসহ তিন বিচারকের পদ শূন্য থাকায় প্রায় সাত হাজার দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার বিচারকাজ থেমে আছে। এতে তৈরি হচ্ছে মামলাজট। এ ছাড়া দূরদূরান্ত থেকে বিচারপ্রার্থীরা মাসের পর মাস আদালতে এসে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, গত ২ সেপ্টেম্বর বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান জেলা ও দায়রা জজ মমতাজ বেগম। এরপর থেকে জেলার দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতের প্রধান কর্মকর্তা জেলা ও দায়রা জজের পদটি শূন্য হয়ে যায়। গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মুহাম্মদ আনোয়ার ছাদাত বদলি হন। এ ছাড়া গত বছরের ৩১ জুলাই সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৫–এর বিচারক হাসান মোহাম্মদ আরিফুর রহমান অন্যত্র বদলি হওয়ার পর থেকে এ পদও শূন্য রয়েছে।

সূত্র জানায়, বিচারক-সংকটে মামলাজট দেখা দিয়েছে। এসব মামলার বাদী-বিবাদীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জেলা ও দায়রা জজসহ তিন বিচারক না থাকায় ৬ হাজার ৯৬৯টি দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার বিচারকাজ থেমে আছে। এর মধ্যে জেলা ও জজ আদালতে দেওয়ানি মামলা ২৮২টি ও ফৌজদারি ৮৩৪টি, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২–এ দেওয়ানি ৪ হাজার ২৩৪টি ও ফৌজদারি ১ হাজার ১৮টি এবং সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৫–এ দেওয়ানি ও ফৌজদারিসহ ৬০১টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
জেলা সরকারি আইন কর্মকর্তা (জিপি) মো. মেহের উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বিচারক না থাকায় সংশ্লিষ্ট আদালতগুলোতে সাক্ষী ও শুনানি গ্রহণ কার্যক্রম থেমে আছে। এতে তৈরি হচ্ছে মামলার জট। দূরদূরান্ত থেকে বিচারপ্রার্থীরা আদালতে এসে হয়রানির শিকার হওয়ায় তাঁদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে।
গত সোমবার যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২–এ মামলার শুনানিতে অংশ নিতে আসেন সিঙ্গাইর উপজেলার জয়মন্টপ ইউনিয়নের খেলেশ্বর গ্রামের খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, ২০১২ সালে জমিসংক্রান্ত বিবাদ নিয়ে তাঁর প্রতিপক্ষ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দেওয়ানি মামলা করেন। পরে মামলাটি যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২–এ স্থানান্তর করা হয়। আদালতে বিচারক না থাকায় এ পর্যন্ত মামলার কোনো শুনানিই হয়নি।

২০১৩ সালে দৌলতপুর উপজেলার দৌলতপুর এলাকার মুক্তিযোদ্ধা বজলুল হকের বিরুদ্ধে সহকারী জজ (দৌলতপুর) আদালতে মামলা করেন তাঁর প্রতিপক্ষ। মামলায় বজলুলের পক্ষে রায় দিলে প্রতিপক্ষ এ রায়ের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন। পরে জেলা ও দায়রা জজ আদালত মামলাটি যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২–এ স্থানান্তর করা হয়। বজলুল হক বলেন, আদালতে বিচারক নেই। প্রতি তারিখে আদালতে এসে হয়রানির শিকার হয়ে ফিরে যাচ্ছেন তিনি।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি জামিলুর রশিদ খান বলেন, যাতায়াত ভাড়া দিয়ে প্রতি ধার্য তারিখে বিচারপ্রার্থীরা সাক্ষীদের আদালতে হাজির করাচ্ছেন, আপ্যায়ন করাচ্ছেন। আইনজীবী-সহকারীদের ফি দিচ্ছেন। কিন্তু বিচারকের না থাকায় সাক্ষ্য গ্রহণ পিছিয়ে যাচ্ছে। এতে বিচারপ্রার্থীদের পাশাপাশি আইনজীবীরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এসব বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুস সালাম বলেন, বিচারক না থাকায় বিচারিক কাজের স্বাভাবিক গতি কমে যায়। জেলা ও দায়রা জজ না থাকায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তবে বিচারিক কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে জেলা ও দায়রা জজের বিশেষ প্রয়োজন। বিচারকদের শূন্য পদগুলোতে দ্রুত সময়ের মধ্যে পদায়নের দাবি জানান তিনি।