মানিকগঞ্জে লুৎফর রহমানের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

করোনাসংকটে সম্মুখযোদ্ধা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। করোনা উপসর্গ ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ থেকে শুরু করে চিকিৎসা এবং কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের গুরুদায়িত্ব পালন করতে হয়। পাশাপাশি সাধারণ রোগীদেরও চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যগত পরামর্শ দিতে হচ্ছে। এ জন্য কর্মস্থলে তাঁদের উপস্থিতি এবং পেশাগত দায়িত্ব পালন জরুরি। বিষয়টি নিশ্চিত করতে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন।

গুগল মিট-এ অনলাইন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সদর উপজেলায় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রতিদিন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হাজিরা নিশ্চিত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে আসা রোগীদের পরামর্শ ও সেবা নিশ্চিতের পাশাপাশি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সমস্যা নিয়েও আলোচনা করা হয়।
সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানা যায়, এই উপজেলায় ৪টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ২৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ২৪০টি টিকাদান কেন্দ্র রয়েছে। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৯৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বাস্থ্যসেবায় কাজ করছেন। এক মাস আগে থেকে অনলাইন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সপ্তাহে ছয় দিন সকাল নয়টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত তাঁদের কর্মস্থলে উপস্থিতি এবং পেশাগত দায়িত্ব নিশ্চিত করা হচ্ছে।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লুৎফর রহমানের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, গুগল মিট-এ অনলাইন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন। রোগীদের সেবা দিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, তাঁদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে আলোচনা করছিলেন লুৎফর রহমান।
কথা হলে লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমাদের অনেক ইতিবাচক কার্যক্রম আছে, যেমন অনলাইনে হাজিরা নিশ্চিতকরণ, করোনার পরিস্থিতিতে নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদান, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের বাড়িতে গিয়ে ওষুধ ও স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান, তাঁদের সার্বিক খোঁজখবর নেওয়া, লকডাউন নিশ্চিতকরণ এবং মৃত ব্যক্তিদের দাফনে সহযোগিতা করা। এ ছাড়া বন্যার সময় প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, স্বাভাবিক প্রসব ও মাতৃস্বাস্থ্য সেবা এবং সাধারণ রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা চলমান রাখা হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে বাগান ও সামাজিক বনায়নের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।’

লুৎফর রহমান বলেন, এসব কার্যক্রম যথাসময়ে এবং সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। অনলাইন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রতি মুহূর্তে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এই উদ্যোগে সুফলও মিলছে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মস্থলে উপস্থিতির হার এখন শতভাগ।
অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হাজিরা নিশ্চিত করার ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ লুৎফর রহমান দেশে প্রথম শুরু করেছেন বলে ধারণা সিভিল সার্জন আনোয়ারুল আমিন আখন্দের। তিনি বলেন, কাজের প্রতি দায়িত্বশীলতার কারণে ইতিমধ্যে জেলা সদরে কর্মদক্ষতার শতভাগ সফলতা দেখিয়েছেন লুৎফর। এখন থেকে নিয়মিত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের শুধু হাজিরা নিশ্চিত করাই নয়, কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে কিছু কিছু জটিল-কঠিন রোগীকেও সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।