মানুষের ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে জাজিরা ব্লাড ব্যাংক

জাজিরা ব্লাড ব্যাংকের এক সদস্য রক্ত দান করছেন। সাম্প্রতিক ছবি
সংগৃহীত

শরীয়তপুরে সরকারি ও বেসরকারি কোনো হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংক নেই। প্রয়োজনের সময় অসুস্থ মানুষের রক্তের জন্য হাহাকার করতে হতো। এমন পরিস্থিতিতে জাজিরা উপজেলার কয়েকজন তরুণ জাজিরা ব্লাড ব্যাংক নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। বর্তমানে সংগঠনটি জেলার মানুষের ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে।

‘যদি হই রক্তদাতা, জয় করব মানবতা’ স্লোগান নিয়ে চার তরুণ—পলাশ খান, মাহমুদুল হাসান, বরকত মোল্যা ও আবু জাফর মল্লিক ২০১৭ সালে জাজিরা ব্লাড ব্যাংক নামে ফেসবুকে একটি গ্রুপ খোলেন। এর মাধ্যমে রক্ত দেওয়ার জন্য ৫০০ সদস্য নিবন্ধন করেছেন। নির্ধারিত ছকে রক্তদাতাদের ঠিকানা, ফোন নম্বর ও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। কোনো রোগীর রক্তের প্রয়োজন হলে ওই গ্রুপের সদস্যরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেখানে পৌঁছে যান। ওই গ্রুপের সদস্যরা এ পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ শ রোগীকে রক্ত দিয়েছেন। অনেকে ৭-৮ বারও রক্ত দিয়েছেন। নিজ জেলা ছাড়াও মাদারীপুর, ফরিদপুর, বরিশাল, রংপুর, ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে ওই গ্রুপের সদস্যরা রক্ত দিয়েছেন।

চলতি মাসের ২ জুন ঢাকার শিশু হাসপাতালে সানজিদা ইয়াসমিন (১১) নামের একটি শিশুর কিডনির ডায়ালাইসিস চলছিল। হঠাৎ তার জন্য ও নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের প্রয়োজন হয়। তাঁর স্বজনেরা ফেসবুকের মাধ্যমে রক্ত চেয়ে পোস্ট দেন। বিষয়টি নজরে আসে জাজিরার বাসিন্দা ওই গ্রুপের অ্যাডমিন বরকত মোল্যার। তিনি দ্রুত ঢাকায় গিয়ে ওই শিশুকে রক্ত দেন।

সানজিদা টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকার রফিকুল ইসলামের মেয়ে। রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার মেয়ের রক্তের গ্রুপ দুর্লভ। দ্রুত পাওয়া যায় না। ওকে সুস্থ রাখতে দ্রুত রক্তের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু পাচ্ছিলাম না। তখন ফেসবুকে পোস্ট দিই। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শরীয়তপুরের জাজিরা থেকে বরকত মোল্যা নামের একজন যোগাযোগ করেন। তিনি হাসপাতালে এসে আমার মেয়েকে রক্ত দিয়েছেন। আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।’ বরকত মোল্যা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমি ১২ বার রক্ত দিয়েছি। রক্ত দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচানো আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আমার এক ব্যাগ রক্তে যদি কোনো মানুষ সুস্থ হয়ে ওঠেন, তাহলে ক্ষতি কী? আমরা সুস্থ প্রত্যেক মানুষকে আহ্বান জানাই রক্ত দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ান।’

জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, জাজিরার তরুণদের রক্তদানের উদ্যোগ এখন দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই তরুণেরা রাত-দিন, ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে মানুষের পাশে যান। রক্ত দেন।

জাজিরা ব্লাড ব্যাংকের পরিচালক পলাশ খান বলেন, ‘আমাদের এ অঞ্চলে কোনো হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংক নেই। অসুস্থ মানুষের রক্তের প্রয়োজন হলে বিপাকে পড়তে হতো। বিষয়টি আমাদের খুব কষ্ট দিত। তখন আমরা জাজিরা ব্লাড ব্যাংক নামকরণ করে একটি অনলাইন গ্রুপ তৈরি করি।’

শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন আবদুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, নানান টেকনিক্যাল কারণে শরীয়তপুরে কোনো ব্লাড ব্যাংক নেই। এ কারণে রোগীদের বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীদের স্বেচ্ছায় রক্তদানের ওপর নির্ভর করতে হয়। জাজিরা ব্লাড ব্যাংকের কার্যক্রম বেশ সাড়া ফেলেছে। মানুষ তাদের প্রতি ভরসা রাখছে।