মানুষের ভালোবাসার প্রতিদান দিতেই নির্বাচন করব

ঝুমন দাশ
ছবি ফেসবুক

হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হককে নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় ছয় মাস কারাগারে ছিলেন সুনামগঞ্জের ঝুমন দাশ (২৬)। এবার তিনি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। জেলার শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার জন্য তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। পঞ্চম ধাপে আগামী ৫ জানুয়ারি এই উপজেলার চারটি ইউপিতে ভোট হবে। নির্বাচন করার বিষয়সহ নানা বিষয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে ঝুমন দাশের সঙ্গে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: হঠাৎ নির্বাচন করার চিন্তা কেন?

ঝুমন দাশ: হঠাৎ কথাটা ঠিক নয়। আমি মানুষের সঙ্গে সব সময়ই আছি। গত নির্বাচনে আমি একজন প্রার্থীর হয়ে কাজ করেছি। তিনি নির্বাচিতও হয়েছেন। কিন্তু ভোট চাইতে গিয়ে মানুষকে যেসব কথা দিয়েছিলাম, যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, সেগুলো পূরণ হয়নি। এবার আমার সংকটে দেশ-বিদেশের মানুষের সঙ্গে এলাকার লোকজন যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের সেই ভালোবাসার প্রতিদান দিতেই আমি নির্বাচন করব। আমি এলাকার জন্য, মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। আমি তো জেলার বাইরে যেতে পারব না। এলাকাতেই থাকতে হবে। তাই এলাকায় থেকেই মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চাই। এ কারণেই নির্বাচন করতে চাওয়া।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পর মানুষ আপনাকে কীভাবে নিচ্ছে?

ঝুমন দাশ: এলাকার অনেকেই আমাকে চিনতেন না। যাঁরা কখনো সরাসরি আমাকে দেখেননি, তাঁরাও এখন নাম জানেন। কোনো গ্রামে গেলে মানুষ জড়ো হয়, ঝুমন দাশকে দেখতে আসে। মানুষজন ভালোবাসে বলেই তো আজ আমার এই পরিচিতি, এই অবস্থান। আমার ইউপিতে ৩০টি গ্রাম আছে। আমি গত ১০-১২ দিনে বেশির ভাগ গ্রামেই ঘুরেছি। আমাকে নিয়ে মানুষের ব্যাপক আগ্রহ।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: মানুষজন কি আপনার সেই ঘটনা সম্পর্কে জানতে চায়, কোনো মন্তব্য করে?

ঝুমন দাশ: মানুষ কোনো কিছু বলার আগে আমিই বিষয়টি সম্পর্কে বলি। তাঁদের জানাই, আমি কোনো অন্যায় করিনি। যেভাবে বিষয়টি প্রচারিত হয়েছিল, সেটি সঠিক নয়। তারপরও যদি কেউ আমার সম্পর্কে ভুল বুঝে থাকেন, আমি সবার কাছে ক্ষমা চাই। এটি মানুষজন ভালোভাবে নেয়। আমি সব গ্রামে যাব, সবার সমর্থন চাইব। প্রয়োজনে সবার কাছে ক্ষমা চাই।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: কোনো দলের সমর্থন বা মনোনয়ন চেয়েছিলেন?

ঝুমন দাশ: আমি কোনো দল করি না। কোনো দলের মনোনয়নও চাইনি। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ছোটবেলা থেকেই অনুপ্রাণিত। আমার পরিবারে সাতজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি স্বাধীনতার পক্ষের লোক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করি। আমি মনে করি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজনের সমর্থন পাব।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনার মামলার বর্তমান অবস্থা কী?

ঝুমন দাশ: মামলাটি সিলেটে স্থানান্তরিত হয়েছে। কিন্তু আদালত আমাকে যেসব শর্তে জামিন দিয়েছেন, তার মধ্যে একটি হলো আমি জেলার বাইরে যেতে পারব না। তবে এখন তো আমাকে সিলেটে যেতে হবে। এ জন্য আদালতে আবেদন করেছি। আবার ৮ ডিসেম্বর মামলার ধার্য দিন, আদালতে যেতে হবে। পরের দিন মনোনয়নপত্র জমা দেব। আমাকে এখন সুনামগঞ্জ, সিলেট ও শাল্লায় দৌড়াতে হবে। এটি একটি সমস্যা।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: নির্বাচন নিয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে?

ঝুমন দাশ: আমার পারিবারিক অবস্থা সবাই জানে। আমরা আর্থিকভাবে খুবই দুর্বল। আমি বিত্তবানদের সহায়তা চাই। এখন গ্রামে গ্রামে ‘ঝুমন দাশ’ ‘ঝুমন দাশ’ বলে একটা রব উঠেছে। যাঁরা আমার সঙ্গে নির্বাচন করবেন, তাঁদের কেউ কেউ অন্য চিন্তা করছেন। আমার মনোনয়ন বাতিলের চেষ্টা হতে পারে। কিন্তু কোনো কিছুতেই আমি থামব না। আমি মানুষের কাছে খালি হাতেই যাব। আশা করি মানুষ আমাকে ফেরাবে না।