বনবিড়ালের জন্য ভালোবাসা

উদ্ধার হওয়া বনবিড়ালের ছানাগুলো। গতকাল বিকেলে শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে।  প্রথম আলো
উদ্ধার হওয়া বনবিড়ালের ছানাগুলো। গতকাল বিকেলে শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। প্রথম আলো

মুরগি সাবাড় করে দেওয়ায় গ্রামের মানুষের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক বনবিড়াল বা বাগডাশের। চিরাচরিত এই বৈরিতাও কখনো মমতায় রূপ নেয় প্রাণের প্রতি ভালোবাসার কারণে। তেমনি ভালোবাসা দেখালেন গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার আনজাব গ্রামের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। মা-হারা ছয় বনবিড়ালছানাকে মমতায় তুলে নিয়ে তাঁরা পাঠিয়েছেন সাফারি পার্কে।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে কথা হয় আনজাব মহিলা আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক মোজাম্মেল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, সোমবার তাঁদের মাদ্রাসার একটি পরিত্যক্ত কক্ষে ছানাগুলোর খোঁজ মেলে। তিনি জানান, সেদিন সকালে মাদ্রাসার কাছে একটি মৃত বনবিড়াল পাওয়া যায়। কেউ এটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। কিছুক্ষণ পর মাদ্রাসার আয়া পরিত্যক্ত ঘর থেকে বিড়ালের ছানার মতো শব্দ শুনতে পান। তিনি বিড়ালের ছানা ভেবে এগুলোকে মাদ্রাসা সুপারের কাছে নিয়ে যান। পরে জানা যায়, বিড়াল নয়, ছানাগুলো বাগডাশের। এগুলো স্থানীয়ভাবে বনবিড়াল হিসেবে পরিচিত। মাদ্রাসার শিক্ষক মোজাম্মেল হক ও অন্যান্য কয়েকজন শিক্ষক এগুলোর বিষয়ে গুরুত্ব দিলেন। তাঁরা ইন্টারনেট ঘেঁটে বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক জহির উদ্দিন আকনের মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করেন। এ তথ্য জানালে তিনি তাঁর কর্মী পাঠিয়ে পরদিন সেগুলো উদ্ধার করে গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেন। পার্কের বন্য প্রাণী পরিদর্শক আনিসুর রহমান সেগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেন। এর আগে সোমবার ছানাগুলোকে মাদ্রাসার দপ্তরি শরিফের বাড়িতে নিয়ে রাখতে বলেন শিক্ষকেরা। শরিফ সেগুলোকে গরুর দুধ খাইয়ে সতেজ রাখেন। পরদিন মঙ্গলবার সকালে শরিফ ছানাগুলোকে মাদ্রাসায় নিয়ে যান। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সেদিন দুধ সংগ্রহ করে ছানাগুলোকে খাওয়ায়।

মাদ্রাসার শিক্ষকেরা জানান, শিক্ষার্থীরা সবাই  ছানাগুলোর প্রতি আদর দেখিয়েছে। তারা কেউ এগুলোকে মেরে ফেলা বা কোথাও ফেলে দেওয়ার পক্ষে ছিল না। অনেকেই বলছিল, এরাও তো মা বাগডাশের সন্তান, এদেরও বাঁচার অধিকার আছে।

শিক্ষক মোজ্জাম্মেল হোসেন বলেন, ‘এগুলোকে দেখেই মায়া জাগে। অনেকেই ছানাগুলোকে পানিতে ফেলে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু আমরা তা করিনি। কারণ, প্রাণের গুরুত্ব সব প্রাণীর জন্যই সমান। জীবন তো সৃষ্টি করা যায় না। তা ছাড়া ছানাগুলোর মাকে মাদ্রাসার কাছে মরে পড়ে থাকতে দেখেছি। হয়তো বাবাও কারও হাতে মারা পড়েছে। এগুলোর এমন অসহায় পরিস্থিতিতে মানুষের সহানুভূতি পাওয়া উচিত।’ তিনি বলেন, মুরগি খেয়ে ফেলে এটা ঠিক, তবে এটাও তো তাদের খাদ্যশৃঙ্খলের প্রাকৃতিক নিয়ম।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান বলেন, বাগডাশের ছানাগুলোকে না মেরে বরং যত্ন করে যাঁরা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন, তাঁরা প্রাণের প্রতি মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ছানাগুলো আমাদের তত্ত্বাবধানে রেখেছি। ফিডারের মাধ্যমে দুধ খাওয়ানো হচ্ছে। বড় হলে এগুলোকে উপযুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে অবমুক্ত করা হবে।’ তিনি জানান, বাগডাশ বা বনবিড়াল গাজীপুরের বনাঞ্চলে একসময় প্রচুর দেখা যেত। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এখন এগুলো হরিয়ে যাচ্ছে। মানুষের হাতে মারা পড়ছে।