মামলার পর এলাকা পুরুষশূন্য, হয়রানি করা হবে না বলে পুলিশের মাইকিং

গাইবান্ধা পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে গত শনিবার একটি কেন্দ্রের ব্যালট ও মালামাল নিয়ে ফেরত আসার মুহূর্তে পুলিশের ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা। পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট ও র‍্যাবের আরও তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করেন তারা।
ফাইল ছবি

গাইবান্ধায় পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় গত তিন দিনে নতুন করে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে যাওয়ায় শহরের পুর্বকোমরনই এলাকা এখন পুরুষশূন্য। নারীরা থাকলেও তাঁদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এদিকে আতঙ্ক কাটাতে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে পুলিশের পক্ষে মাইকিং করে বলা হচ্ছে, অকারণে কাউকে হয়রানি করা হবে না।

আজ সকালে গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজার রহমান বলেন, ঘটনার পর থেকে এলাকার লোকজন পলাতক। ফলে নতুন করে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।

আজ সকালে গাইবান্ধা শহরের পুর্বকোমরনই এলাকা সরেজমিনে কোনো পুরুষ দেখা যায়নি। এলাকায় শুধু নারী, বৃদ্ধ ও ছোট শিশুরা আছে। শীতের সকালে চায়ের দোকান ও রাস্তার মোড়ে মোড়ে যে আড্ডা হচ্ছিল, তাও নেই। সম্ভাব্য গ্রেপ্তারের ভয়ে লোকজন এলাকাছাড়া হয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুর্বকোমরনই এলাকার এক নারী বলেন, ‘হামাঘরে এলাকাত গন্ডগোল হচে। পোত্তেকদিন পুলিশ আইসে। পুলিশের ভয়োত কয় দিন থাকি হামার সোয়ামি পলে আচে। হামরা বাড়িত অসুবিধেত আচি।’ আরেক নারী বললেন, ‘হামার সোয়ামি গন্ডগোলের সমায় এলাকাত আচিলো না। তাও পলে আচে। না থাকি কী করবে, যদি পুলশে ধরে। এদিকে বাড়িত বাজার নাই। সমস্যায় আচি।’  

একই এলাকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক নারী বলেন, ঘটনার দিন রাতেই এলাকার পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। লোকজনকে গ্রেপ্তারে পুলিশ এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে। আসামিদের খোঁজখবর নিচ্ছে। এ কারণে পুরুষেরা পালিয়ে আছেন। ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে নারীরা আতঙ্কে আছেন।

গাইবান্ধা সদর থানার ওসি বলেন, তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদেরই গ্রেপ্তার করা হবে। কাউকে হয়রানি করা হবে না। আতঙ্ক কাটাতে আজ সকাল নয়টা থেকে পুর্বকোমরনই এলাকায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, জেলা পরিষদের সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে মাইকিং ও গণসংযোগ করা হয়েছে। সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। ভয়ের কোনো কারণ নেই। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীদের ধরা হবে, নিরপরাধ কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না।

গত শনিবার সন্ধ্যায় গাইবান্ধা পৌরসভা নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষে শহরের পূর্বকোমরনই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা না করেই সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে পুলিশ ও নির্বাচনী অফিসের লোকজন ব্যালট এবং মালামাল নিয়ে রওনা দেন—এমন অভিযোগে বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের বহিষ্কৃত সদস্য আনওয়ারুল সরওয়ারের (রেলইঞ্জিন) সমর্থকেরা পুলিশের ওপর হামলা করে একটি গাড়িতে আগুন দেয়। তারা পুলিশ ও র‌্যাবের আরও তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় পুলিশও কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে এবং লাঠিপেটা করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে উত্তেজিত জনতার পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত মোহাম্মদ খালেদের বাড়ি ও একটি মোটরসাইকেলসহ এলাকার কয়েকটি দোকান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের মেহের ও সেলিম নামের দুই কর্মী এবং তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হন। তাঁদের গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এই ঘটনায় শনিবার গভীর রাতে গাইবান্ধা সদর থানায় দুটি মামলা হয়েছে। গাইবান্ধা রিজার্ভ পুলিশের পরিদর্শক মক্তাদুর রহমান এবং র‌্যাব বাদী হয়ে মামলা দুটি করে। সন্ত্রাস দমন আইনে একই অভিযোগে মামলা দুটি করা হয়। পুলিশের মামলায় ৪১ জনের নাম উল্লেখের পাশাপাশি ১০০ থেকে ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। র‌্যাব ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১৫০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে মামলা করে। মামলা দায়ের পর ওই রাতেই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে গত তিন দিনে আর কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।