মারমাদের ছেছমা পিঠা

বিন্নি চালের গুঁড়া, নারকেল ও গুড় দিয়ে তৈরি হয় মারমাদের ঐতিহ্যবাহী ছেছমা পিঠা। ৬ জানুয়ারি বিকেলে খাগড়াছড়ি শহরের পানখাইয়াপাড়া বটতলী এলাকায়।  নীরব চৌধুরী
বিন্নি চালের গুঁড়া, নারকেল ও গুড় দিয়ে তৈরি হয় মারমাদের ঐতিহ্যবাহী ছেছমা পিঠা। ৬ জানুয়ারি বিকেলে খাগড়াছড়ি শহরের পানখাইয়াপাড়া বটতলী এলাকায়। নীরব চৌধুরী

ছেছমা পিঠা, শীতের সময়ে পাহাড়ে যার জুড়ি নেই। মারমা জনগোষ্ঠীর নানা ধরনের পিঠার মধ্যে ‘ছেছমা’ সবচেয়ে জনপ্রিয়।

খাগড়াছড়ির মারমাদের কাছে ‘ছেছমা’, বান্দরবানের মারমাদের কাছে ‘ছাইস্ববক্ মু’ নামে পরিচিত। খাগড়াছড়িতে সরকারি, বেসরকারি কিংবা পারিবারিক অনুষ্ঠানের মেনুতে সবার আগে নাম আসে ছেছমা পিঠার। মূলত মারমাদেরই পিঠা, কিন্তু অন্যদের কাছেও রয়েছে এই পিঠার কদর। বিশেষ করে পর্যটকেরা খাচ্ছেন। দামও হাতের নাগালেই। ছেছমা পিঠা বিক্রি করে সংসারও চালাচ্ছেন অনেক নারী।

উন্নয়নকর্মী সুইচিংথুই মারমার কাছ থেকে জেনে নেওয়া গেল এই পিঠার হাঁড়ির খবর। তিনি জানান, খাঁটি বিন্নি চাল প্রথমে ভিজিয়ে রেখে ঢেঁকিতে মিহি করে গুঁড়া করতে হবে। তারপর অ্যালুমিনিয়ামের কড়াইতে চালুনির সাহায্যে ছাঁকনি দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ চালের গুঁড়া ছিটিয়ে দিয়ে কিছু সময় ঢেকে রাখতে হবে। এরপর জালির মতো শক্ত হলে নামিয়ে নারকেল দিয়ে মুড়িয়ে দিলেই তৈরি হবে ছেছমা পিঠা। তবে আগে থেকে নারকেল, গুড় বা চিনি দিয়ে লালচে রং ধরা পর্যন্ত ভেজে নিতে হবে।

খাগড়াছড়ি বাজারের শাপলা চত্বরে একটি ১০ টাকা করে ছেছমা পিঠা বিক্রি করছেন লাইছেইন্দা মারমা। সেদিন সন্ধ্যায় তাঁকে ঘিরে ছিলেন একদল পর্যটক। সেখানে কথা হয় রাইহান উদ্দিন ও ফওজিয়া উদ্দিনের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, ‘দেখতে অনেকটা পাটিসাপটা পিঠার মতো, তবে খেতে অনেক মজা।’ প্রথমবার তাঁরা এই পিঠা খেয়েছেন এবং তৈরি করতে দেখেছেন। এখন অপেক্ষায় আছেন পিঠা তৈরি হলেই রাতে বাড়ির জন্য ঢাকায় নিয়ে যাবেন।

খাগড়াছড়ি ঠাকুরঠড়া এলাকার ডলিপ্রু মারমা প্রতিদিন আট শ থেকে এক হাজার টাকার পিঠা বিক্রি করেন। ‘সব খরচ বাদ দিয়ে চার-পাঁচ শ টাকা থাকে। এতেই সংসার চলে। শীতকালে এটি আমাদের বাড়তি উপার্জনের ক্ষেত্র।’ বললেন ডলিপ্রু।

জেলা পরিষদ পার্কের সামনে পিঠা বিক্রি করেন নিউক্রাই মারমা। তিনি জানান, অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করে চারজনের সংসার চালান। অন্য সময় দৈনিক মজুরির কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন দেড় কেজি চালের পিঠা বিক্রি হলেও ছুটির দিনে তিন কেজি চালের পিঠা বিক্রি করি। মূলত পর্যটকেরাই আমার গ্রাহক।’