‘মায়ের খাওয়া নেই, ছেলে বুকের দুধ পাবে কীভাবে’

আশ্রয়কেন্দ্রে সন্তানদের সঙ্গে মাফিয়া বেগম। মঙ্গলবার সিলেট নগরের শাহজালাল উপশহরের তেররতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

আশ্রয়কেন্দ্রে যে পরিমাণে খাবার পাচ্ছেন, তা ছয় ছেলেমেয়েকে নিয়ে ভাগাভাগি করে খাচ্ছেন মাফিয়া বেগম। কিন্তু বিপত্তিতে পড়েছেন চার মাসের শিশুকে নিয়ে। পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছে না সে, কান্নাকাটি করছে।

সে কান্না দেখে এগিয়ে গেলে মাফিয়া বেগম বলেন, ‘মায়ের খাওয়াদাওয়া না হলে বুকের দুধ পাবে কীভাবে। সঙ্গে কিছুই নেই। বাচ্চাদের নিয়ে এককাপড়ে ঘর থেকে বের হয়েছি, সেই কাপড়েই থাকতে হচ্ছে।’

মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে মাফিয়া বেগমের সঙ্গে কথা হয় সিলেট নগরের শাহজালাল উপশহরের তেররতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে। চার মাসের ছেলে জয়ের কান্না থামিয়ে কোলে নিয়ে হাঁটছিলেন মাফিয়া। পাশে ছয় বছরের ছেলে সুজন আহমদ হাঁটাচলা করছে। ১১ বছরের সাগর বন্যার পানিতে খেলছে। চার বছরের বিজয় একটি গেঞ্জি পরে দাঁড়িয়ে। ২১ বছরের মেয়ে তাসকিয়া ও ১২ বছরের মেয়ে তাহমিনা আরেকটি কক্ষে।

মাফিয়া বেগম থাকেন শাহজালাল উপশহরের তেররতন মালেক মিয়ার কলোনিতে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ঘরে যখন পানি ঢোকে, তখন ছয় ছেলেমেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসেন।

মঙ্গলবার আশ্রয়কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে বলেন, ছয় সন্তানসহ সংসারের খরচ জোগাতে পরের বাড়িতে কাজ করেন। জয় যখন পেটে, তখন স্বামী আরেক নারীকে বিয়ে করে চলে যান। এর পর থেকে স্বামীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নেই। তাঁদের গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মুরাপুরে।

তেররতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দোতলা ভবনের ৪টি কক্ষে ৩১টি পরিবার বাস করছে। বাইরে পানি থাকলেও আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার পানি ও ব্যবহারের পানির সংকট। শৌচাগার থাকলেও তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। স্থানীয় অনেকে নিজেদের উদ্যোগে আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার দিয়ে যান। রান্না করা খাবারগুলো নষ্ট হয়ে যায়। আবার অনেকে শুকনা খাবার দিয়ে যান, সেগুলো দিয়ে ক্ষুধার জ্বালা মেটায় আশ্রয়কেন্দ্রটির বাসিন্দারা।

আরও পড়ুন