মায়ের ছায়া হয়ে আছেন তাঁরা

শিশুটির মা মানসিক ভারসাম্যহীন। হাসপাতালে আসা সঞ্জু দাশ নামের এক নারী শিশুটিকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন। তাঁর দুপাশে দুই নার্স শিশুটির দেখাশোনা করছেন। গতকাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে।  ছবি: গাজী ফিরোজ
শিশুটির মা মানসিক ভারসাম্যহীন। হাসপাতালে আসা সঞ্জু দাশ নামের এক নারী শিশুটিকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন। তাঁর দুপাশে দুই নার্স শিশুটির দেখাশোনা করছেন। গতকাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে। ছবি: গাজী ফিরোজ

জন্ম দেওয়ার পর মানসিক ভারসাম্যহীন মা আর বুকে নেননি শিশুটিকে, পড়ে ছিল ফুটপাতে। সেখান থেকে একজন পুলিশ কর্মকর্তা শিশুটিকে নিয়ে যান হাসপাতালে। আরেক শিশুকে হাসপাতালে রেখে উধাও হয়ে যান মা। তিন দিন ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডের ছোট্ট শয্যা এখন এ দুই শিশুর ঠিকানা। 

মা–বাবা বা অন্য কোনো স্বজনের ভালোবাসার পরশ আর নিরাপত্তার ছায়া না পেলেও এই শিশুদের পাশে এখন কয়েকজন মা। নিজের সন্তানের পাশাপাশি এদেরও বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তাঁরা। শিশু দুটির বাড়তি যত্ন নিচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স, আয়া ও পুলিশ সদস্যরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, দুই শিশুর একটিকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এক মা। নগরের বাকলিয়া থেকে আসা সঞ্জু দাশ তাঁর সন্তানকে নিয়ে পাঁচ দিন ধরে এ ওয়ার্ডে রয়েছেন। বলেন, শিশুটির মা মানসিক ভারসাম্যহীন। তাই নিজ সন্তানের মতোই একে দুধ খাওয়াচ্ছেন। তাঁর মতো আরও কয়েকজন মা–ও শিশুটিকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন।

পরে শিশুটিকে কোলে নিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করছিলেন হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ নার্স মরিয়ম বেগম। তিনি বলেন, শিশুটির কোনো নাম রাখা হয়নি। তাঁরা এখন ‘বেবি’ নামেই ডাকছেন। শিশুটি সম্পর্কে চিকিৎসক পারমিতা বড়ুয়া জানান, শিশুটির ওজন মাত্র ১৮০০ গ্রাম। শিশুটির মা মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় অন্য মায়েরা শিশুটিকে দুধ খাওয়াচ্ছেন।

গত মঙ্গলবার ভোর পাঁচটার দিকে ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ সোনালী ব্যাংকের সামনের ফুটপাতে পড়ে ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী ও তাঁর সদ্যোজাত শিশুটি। ওই সময় থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান মা ও শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যান। শিশুটি হাসপাতালের ষষ্ঠ তলায় থাকলেও মা রয়েছেন নিচতলায় মানসিক ওয়ার্ডে। সেখানে তাঁকে দেখা গেল, কখনো হাসছেন; কখনো এলোমেলো কথা বলছেন। তিনি পালানোর চেষ্টা করছেন বলে জানালেন চিকিৎসকেরা। তাই শাহীনুর আক্তার নামের এক নারী তাঁর সঙ্গে রয়েছেন। শিশুটিকে উদ্ধারের পর তার মায়ের সঙ্গে হাসপাতালে এসেছিলেন তিনি। শাহীনুর বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীর কেউ না থাকায় তিনিই সঙ্গে আছেন। 

এদিকে থানার কনস্টেবল আশ্রিতা দাশকে গতকাল নবজাতক ওয়ার্ডের বাইরে পাহারায় দেখা গেছে। নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (ডবলমুরিং অঞ্চল) আশিকুর রহমান বলেন, মা মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় শিশুটি চুরি হতে পারে এ জন্য পুলিশি পাহারা রাখা হয়েছে। 

এদিকে নগরের বন্দরটিলা থেকে ১৬ আগস্ট এক দিন বয়সী একটি ছেলেসন্তানকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন নীলুফার আক্তার নামের এক নারী। গত মঙ্গলবার শিশুটিকে ফেলে তিনি উধাও হয়ে গেছেন। কিন্তু থেমে নেই শিশুটির দেখভাল। হাটহাজারী থেকে আসা ইয়াছমিন আক্তার ওই শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন নিয়মিত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন মা হিসেবে নিজের ইচ্ছেয় শিশুটিকে দুধ খাওয়াচ্ছি।’

হাবিবা আক্তার, রুমা আক্তারসহ আরও অনেক মা–ই শিশুটিকে দুধ খাওয়াচ্ছেন বলে জানান জ্যেষ্ঠ নার্স শিলু মজুমদার। পাশাপাশি চিকিৎসক, নার্স, আয়ারা দেখভাল করছেন। শিশুটি সুস্থ রয়েছে জানান চিকিৎসক শামীম আক্তার।