মায়ের মরদেহ বাড়ি নিয়ে যেতে পারছিল না, পাশে দাঁড়ালেন স্বেচ্ছাসেবীরা

স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় মায়ের মরদেহ বাড়ি নিয়ে গেছে অসহায় দুই বোন। গতকাল সোমবার রাতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তোলা
ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তারুন্দিয়া ইউনিয়নের গাবরবোয়ালি গ্রামের দিনমজুর নূর ইসলামের স্ত্রী মিনারা বেগম (৫২) হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে দুদিন আগে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সোমবার মারা যান তিনি। এ সময় তাঁর দুই মেয়ে সুমি (১২) ও সুরাইয়া (১৭) তাঁর সঙ্গে ছিল। মায়ের মৃত্যুতে দিশেহারা দুই মেয়ে মরদেহ কীভাবে বাড়িতে নিয়ে যাবে, কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছিল না।

হাসপাতাল এলাকার দালালদের চক্র মরদেহ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে যে দাম হাঁকাচ্ছিল, সেই টাকা বা সামর্থ্য কোনোটাই ছিল না দুই বোনের। এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করেও সুরাহা হচ্ছিল না। এই সুযোগে দালালেরা টাকা না দিলে মরদেহ শ্মশানে নিয়ে দাহ করে দেবে বলে হুমকি দেয়। এ পরিস্থিতিতে হাসপাতালের বারান্দায় মায়ের মরদেহের সামনে অঝোরে কাঁদতে থাকে দুই বোন। গতকাল সোমবার রাতে এই সমস্যার কথা জানতে পারে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হেল্পপ্লাস ময়মনসিংহ টিম। পরে তাদের মাধ্যমে অর্থ সংস্থানের ব্যবস্থা হয় এবং মধ্যরাতেই মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসে স্বেচ্ছাসেবক দল।

খবর পেয়ে স্বেচ্ছাসেবকেরা দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যান এবং অন্য সদস্যরা অর্থের সংস্থান ও গাড়ি ভাড়ার চেষ্টা করতে থাকেন। এ সময় আনন্দ মোহন কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের একজন শিক্ষক পরিচয় গোপন রেখে অর্থ প্রদান করেন।

ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেক মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। হেল্পপ্লাস ময়মনসিংহ টিমের উপদেষ্টা আলী ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা খবর পেয়ে দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যান এবং অন্য সদস্যরা অর্থের সংস্থান ও গাড়ি ভাড়ার চেষ্টা করতে থাকেন। এ সময় আনন্দ মোহন কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের একজন শিক্ষক পরিচয় গোপন রেখে অর্থ প্রদান করেন। সেই টাকায় গাড়ি ভাড়া করে রাতেই মরদেহ নিয়ে রওনা দেন হেল্পপ্লাস টিমের সদস্যরা।

অসহায় দুই বোনের চাচা শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাতিজিরা মোবাইলে মৃত্যুসংবাদ জানায় এবং তাদের মায়ের লাশ দালালেরা বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে চার হাজার টাকা চাইছে বলেও জানায়। পরে মুঠোফোনে দালালদের একজনের সঙ্গে কথা বললে তারা হুমকি দিয়ে বলে, টাকা না দিলে লাশ শ্মশানে নিয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে পরিচিত এক ব্যক্তির পরামর্শে হেল্পপ্লাস ময়মনসিংহ টিমকে খবর দেন এবং সেই খবরের ভিত্তিতে হেল্পপ্লাসের সদস্যরাই অ্যাম্বুলেন্সে করে ভাবির মরদেহ ও দুই ভাতিজিকে বাড়িতে পৌঁছে দেন।

হেল্পপ্লাস সংগঠনটির বয়স মাত্র তিন বছর। সংগঠনটির সহসভাপতি অলক সরকার বলেন, তাঁরা মূলত অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করেন। এর মধ্যে বেওয়ারিশ লাশ দাফন, পথশিশুদের সহায়তা প্রদান, রাস্তায় পড়ে থাকা বৃদ্ধদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা এবং নাম–ঠিকানাবিহীন কিংবা মানসিক ভারসাম্যবিহীন মানুষকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে এই সংগঠন। এ ছাড়া করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিদের সৎকার, রক্তদান, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, সামাজিক সচেতনতা তৈরি, করোনার বিস্তার রোধ প্রভৃতি স্বেচ্ছাসেবকমূলক কাজে ভূমিকা রেখে চলেছে ময়মনসিংহের এই সংগঠন।

হেল্পপ্লাস ময়মনসিংহ টিমের সদস্য সাফরান আহমেদ বলেন, ‘গাড়ি ভাড়ার টাকা না থাকায় দুই বোন তাদের মায়ের মরদেহ বাড়ি নিতে পারছিল না খবর পেয়ে আমরা দ্রুত হাসপাতালে যাই এবং অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে তাদেরকে রাতেই বাড়ি পৌঁছে দিই।’