মির্জাগঞ্জে সেতু ভেঙে পড়ল নদে, নিহত ১

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার শ্রীমন্ত নদে ভেঙে পড়া সেতু। ছবিটি আজ শনিবার সকালে তোলাপ্রথম আলো

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে শ্রীমন্ত নদের ওপর মহিষকাটা বাজারসংলগ্ন সেতুটি একটি অটোরিকশাসহ ভেঙে পড়েছে। এতে এক মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সাতজন। আহত ব্যক্তিদের মির্জাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তির নাম মাওলানা আইয়ুব আলী। তিনি কলাগাছিয়া আসমতিয়া এন্তাজিয়া দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ছিলেন। তাঁর বাড়ি পটুয়াখালীর পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের নলদোয়ানি গ্রামে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে মহিষকাটা বাজার থেকে একটি অটোরিকশা কয়েকজন যাত্রী নিয়ে শ্রীমন্ত নদের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ নড়বড়ে সেতুটি পার হচ্ছিল। এ সময়ে বিকট শব্দে অটোরিকশাসহ সেতুটির মাঝ বরাবর ভেঙে পড়ে। দুর্ঘটনায় পতিত অনেকে সাঁতার কেটে তীরে ফিরতে পারলেও আইয়ুব আলী নিখোঁজ ছিলেন। দুই ঘণ্টা পর ভাঙা সেতুর অদূরে ভাসমান অবস্থায় তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে এলাকাবাসী।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে কলাগাছিয়া আসমতিয়া এন্তাজিয়া দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন, মাদ্রাসার মাওলানা মো. সুলতান আহম্মেদ, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. আবুল কালাম আজাদ, মো. ফোরকানুল আলম, অফিস সহকারী মো. শাহাজাদা ও ঠিকাদার মো. বারেক হোসেনকে মির্জাগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

আহত মো. শাহজাদা বলেন, গতকাল রাতে কলাগাছিয়া আসমতিয়া এন্তাজিয়া দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন মাইক্রোবাসে করে ঢাকা থেকে মহিষকাটা পৌঁছান। তাঁকে এগিয়ে নিতে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আইয়ুব আলীসহ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে মাইক্রোবাসটি পারাপারে এলাকাবাসী বাধা দেয়। সেতুটির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য হেঁটে তাঁরা সেতুর মাঝ বরাবর পৌঁছান। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা যাত্রীবাহী অটোরিকশাসহ সেতুটি ভেঙে নদে পড়ে যায়।

ঘটনার পরপরই মির্জাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খান মো. আবু বকর ছিদ্দিকী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সরোয়ার হোসেন ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমআর শওকত আনোয়ার ইসলাম এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা (স্টেশন অফিসার) মো. শহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

মির্জাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ঘটনাস্থলে যান। এলাকাবাসীর সহায়তায় এক মাদ্রাসার অধ্যক্ষের লাশ উদ্ধার করেন।

এলাকার বেশ কয়েকজনের ভাষ্য, দীর্ঘদিন ধরে শ্রীমন্ত নদের এই সেতু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতু দিয়ে উপজেলার আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন ও মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের কমপক্ষে ১০ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে। গত শুক্রবার বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় এলাকাবাসী গাছের গুঁড়ি ফেলে এবং দুই প্রান্তে লাল নিশান উড়িয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। তবে দূরদূরান্তের মানুষ সেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই ছোট যানবাহনে করে চলাচল করত।

এ ব্যাপারে এলজিইডির মির্জাগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আজিম-উর-রশিদ বলেন, সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এটি পারাপারে স্থানীয় লোকজনকে সতর্ক করা হয়েছে। তবে ওই স্থানে একটি নতুন সেতু নির্মাণের জন্য মাটি পরীক্ষাসহ যাবতীয় কাজ শেষ করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

এলজিইডির দক্ষিণ অঞ্চলের আয়রন ব্রিজ পুনর্বাসন ও পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী আবদুল হাই প্রথম আলোকে বলেন, শ্রীমন্ত নদের ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি সরিয়ে ওই স্থানে একটি নতুন সেতু নির্মাণের জন্য প্রায় এক বছর আগে ডিপিপির প্রকল্পভুক্ত করা হয়। প্রশাসনিক নানা জটিলতার কারণে অনুমোদন না হওয়ায় ব্রিজটি নির্মাণ করা যায়নি।