মির্জাপুরে অ্যাসাইনমেন্ট ফির নামে টাকা আদায়ের অভিযোগ

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বংশাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে শিক্ষার্থীদের দেওয়া অ্যাসাইনমেন্ট খাতা। এর জন্য ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহপ্রতি ১৮০ টাকা, অষ্টম শ্রেণির ২১০ টাকা, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ২৪০ টাকা করে দিতে হচ্ছে।শনিবার সকালে তোলা
প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বংশাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্ট ফির নামে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ একে বকেয়া বেতন আদায়ের কৌশল বলে জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী আছে। করোনা পরিস্থিতিতে চলতি শিক্ষাবর্ষের পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের জন্য ৭ নভেম্বর থেকে অ্যাসাইনমেন্ট শুরু হয়। এর ফলে প্রতি সপ্তাহের শনিবার তিনটি বিষয়ের ওপর শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের এক পাতার অ্যাসাইনমেন্টসংক্রান্ত কাগজ, দুই পাতার সাদা কাগজ ও স্কুলের নামসহ শিক্ষার্থীদের পরিচিতি লিখতে এক পাতার ছাপা কাগজ সরবরাহ করা হচ্ছে, যা নিতে হলে বাধ্যতামূলকভাবে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহপ্রতি ১৮০ টাকা, অষ্টম শ্রেণির ২১০ টাকা, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ২৪০ টাকা করে দিতে হচ্ছে।

আজ শনিবার সকালে সরেজমিনে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সপ্তম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী জানায়, গত শনিবার থেকে তাদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য একটি কাগজে তিনটি বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি বিষয়ের জন্য দুই পাতার সাদা কাগজ দেওয়া হয়েছে। যাতে অ্যাসাইনমেন্ট লিখে মূল্যায়নের জন্য জমা দিতে হবে। তাদের কাছ থেকে প্রতিটি বিষয়ের জন্য ৬০ টাকা করে নিচ্ছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর ফলে দুই শনিবার মিলিয়ে আজ ছয়টি বিষয়ের জন্য ৩৬০ টাকা করে দিতে হয়েছে।

পরীক্ষার নামে দুই পাতার খাতা, এক পাতার কাভার পেজ ও এক পাতার প্রশ্ন দিয়্যা সাবজেক্টপ্রতি ৬০ থিক্যা ৮০ টাকা কইর‌্যা নিতাছে। এমনেই ইনকাম কম। নুন আনতে পানতা ফুরায়। তার ওপর হঠাৎ কইর‌্যা এমন জুলুম। আমাগো খুবই কষ্ট হইতেছে।
অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক

অষ্টম ও নবম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী জানায়, ছয়টি বিষয়ে অ্যাসাইনমেন্ট ফি বাবদ তাদের কাছ থেকে যথাক্রমে ৪২০ ও ৪৮০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, তাদের শ্রেণিতে ১৪টি বিষয় রয়েছে। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ চারটি বিষয়ে বাড়তি অ্যাসাইনমেন্ট নেবে। ওই চারটিসহ তাদের মোট ১৮টি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে বলে জানানো হয়েছে। সে বলে, ‘হঠাৎ করে আমাদের ওপরে এত টাকার চাপ। স্যাররা বুঝতে পারছেন না, বাবা-মায়ের খুব কষ্ট হচ্ছে।’

অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক হাঁটুভাঙা বাজারের ব্যবসায়ী বলেন, ‘পরীক্ষার নামে দুই পাতার খাতা, এক পাতার কাভার পেজ ও এক পাতার প্রশ্ন দিয়্যা সাবজেক্টপ্রতি ৬০ থিক্যা ৮০ টাকা কইর‌্যা নিতাছে। এইটা অভিভাবকগো ওপরে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা মনে অয়। এমনেই ইনকাম কম। নুন আনতে পানতা ফুরায়। তার ওপর হঠাৎ কইর‌্যা এমন জুলুম। আমাগো খুবই কষ্ট হইতেছে।’

অ্যাসাইনমেন্টের সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সব প্রকার টাকা আদায় নিষেধ করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত বেতন নেওয়া যাবে না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মো. হারুন অর রশিদ, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা

জানতে চাইলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন বলেন, ‘এটা অ্যাসাইনমেন্টের ফি নয়। মূলত বকেয়া বেতন নেওয়া হচ্ছে। তবে চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্ধারিত বেতনের ৭০ ভাগ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা অফিসের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা অ্যাসাইনমেন্ট শেষ হলে টাকা আদায় করতে পারব না। এ জন্য কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে।’

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ বলেন, অ্যাসাইনমেন্টের সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সব প্রকার টাকা আদায় নিষেধ করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত বেতন নেওয়া যাবে না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।