মিলাররা সহযোগিতা না করলে মজুত আইনে পরিবর্তন আনবে সরকার

রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের খাদ্য বিভাগীয় কর্মকর্তা ও ধান-চাল ব্যাবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অথিতির বক্তব্য রাখছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। আজ বুধবার বিকেলে নওগাঁ জেলা প্রশাকের সম্মেলন কক্ষে
প্রথম আলো

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, সরকারি গুদামে চাল না দিলে মিলারদের (চালকলমালিক) বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সরকার। পরিস্থিতি বিবেচনায় ক্রয় নীতিমালা ও খাদ্যপণ্য মজুত আইনে পরিবর্তন আনার চিন্তাভাবনা করছে সরকার।

আজ বুধবার বিকেলে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা এবং ধান-চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন। নওগাঁর জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশীদের সভাপতিত্বে এই মতবিনিময় সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ, বাংলাদেশ চালকল ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি লায়েক আলী, নওগাঁ জেলা ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরোধ বরণ সাহা, নওগাঁ জেলা চালমালিক গ্রুপের সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার। এ ছাড়া রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের খাদ্য বিভাগীয় কর্মকর্তা ও ধান-চাল ব্যবসায়ীরাও সভায় বক্তব্য দেন।

সরকারিভাবে চালের মজুত ঠিক রাখতে ইতিমধ্যে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ৭ নভেম্বর থেকে সরকারিভাবে ধান-চাল ক্রয় কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এখনো অনেক মিলমালিক সরকারি গুদামে চাল দেওয়ার জন্য চুক্তি করেননি। ইতিমধ্যে দেড় লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির জন্য টেন্ডার সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও চাল আমদানি করা হবে। তবে চাল আমদানির ফলে কৃষকেরা ক্ষতির শিকার হন, এমন পদক্ষেপ নেওয়া হবে না।

বর্তমানে একটি মিলে পাক্ষিক চাল ছাঁটাইক্ষমতার পাঁচগুণ ধান-চাল মজুত রাখার নিয়ম রয়েছে। এর জায়গায় ধান-চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে একটি মিল পাক্ষিক ছাঁটাইক্ষমতার তিনগুণ ধান-চাল মজুত রাখতে পারবে, এ ধরনের আইন করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
সাধন চন্দ্র মজুমদার, খাদ্যমন্ত্রী

মন্ত্রী আরও বলেন, কৃষকদের লাভ-ক্ষতির কথা চিন্তা করে চাল আমদানি যাতে বেশি না হয়, সে জন্য সরকার বেসরকারিভাবে চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করছে। এ জন্য সরকার নিজেই এবার চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। টেন্ডার আহ্বান করে ঠিকাদারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাল আমদানি করা হবে।

সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, মিলাররা সরকারকে চাল দিয়ে সহযোগিতা না করলে সরকার ধান-চাল ক্রয়ে নীতিমালায় পরিবর্তন আনবে। ইতিমধ্যে ভারতের ধান-চাল সংগ্রহ নীতিমালা সংগ্রহ করা হয়েছে। ভারতের সংগ্রহ নীতিমালা অনুযায়ী মিলারদের পাক্ষিক চাল ছাঁটাইক্ষমতা অনুযায়ী সরকারকে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাল দিতে বাধ্য করা হবে। এ ছাড়া মিলে ধান-চাল মজুত আইনেও পরিবর্তন আনার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বর্তমানে একটি মিলে পাক্ষিক চাল ছাঁটাইক্ষমতার পাঁচগুণ ধান-চাল মজুত রাখার নিয়ম রয়েছে। এর জায়গায় ধান-চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে একটি মিল পাক্ষিক ছাঁটাইক্ষমতার তিনগুণ ধান-চাল মজুত রাখতে পারবে, এ ধরনের আইন করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

সভায় মিলমালিকদের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে চালের ক্রয়মূল্য ৩৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা এবং আমন চাল ক্রয়ে খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ২৬ নভেম্বর থেকে বাড়িয়ে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত করার দাবি তোলা হয়।

কৃষকদের ধানের ন্যায্যমূল্য দিতে সরকার বদ্ধপরিকর উল্লেখ করে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, মৌসুমের শুরুতেই ধান-চালের দর বেঁধে দেওয়া এবং সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহের পরিমাণ বৃদ্ধি করায় সুফল পাচ্ছেন কৃষকেরা। কয়েক বছর ধরে কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে কৃষকদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় যুগোপযোগী ও সময়মতো উদ্যোগ নেওয়ায় কৃষকেরা এখন কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন।

এদিকে সভায় মিলমালিকদের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে চালের ক্রয়মূল্য ৩৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা এবং আমন চাল ক্রয়ে খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ২৬ নভেম্বর থেকে বাড়িয়ে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত করার দাবি তোলা হয়। চাল ব্যবসায়ীরা বলেন, ধানের বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী ১ কেজি চাল আমদানি করতে ৩৮-৪০ টাকা পর্যন্ত উৎপাদন খরচ পড়ছে। সেই জায়গায় সরকারকে ৩৭ টাকা দরে চাল দিতে গিয়ে পরিবহন খরচসহ মিলমালিকদের ৪ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত লোকসান হচ্ছে।