মুক্ত হচ্ছে ২৯ চখাচখি

রাজশাহীর বন্য প্রাণী পুনর্বাসন কেন্দ্রে সুস্থ চখাচখি পাখিগুলো। গতকাল সকালে। ছবি: প্রথম আলো
রাজশাহীর বন্য প্রাণী পুনর্বাসন কেন্দ্রে সুস্থ চখাচখি পাখিগুলো। গতকাল সকালে। ছবি: প্রথম আলো

শীত শেষ। শীতের অতিথি হিসেবে আসা পরিযায়ী পাখিদের এখন ফিরে যাওয়ার পালা। কিন্তু শীতের শুরুতে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে আসা ২৯টি চখাচখি এ মৌসুমে আর তাদের প্রজননভূমিতে ফিরে যেতে পারছে না। শিকারি তাদের বিক্রির উদ্দেশ্যে ধরে ডানা কেটে দিয়েছিলেন। তাদের উদ্ধার করে রাজশাহীর বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ।

উদ্ধারের পর রাজশাহীতে বন বিভাগের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল ২৯টি পাখিকে। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষেআজ শনিবার তাদের নওগাঁর ধামইরহাটের শতবর্ষী আলতাদিঘিতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

আনুমানিক ১৪০০ সনের দিকে এ অঞ্চলের রাজা বিশ্বনাথ জগদল এই দিঘি খনন করেন। এটি আলতাদিঘি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে শালবনঘেরা ৪২ দশমিক ৮১ একরের একটি অপরূপ জলাশয়। আশপাশে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর বসবাস এলাকাটিতে অকৃত্রিম প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। রাজশাহী থেকে ১১০ কিলোমিটার ও নওগাঁ জেলা সদর থেকে ৬০ কিলোমিটার উত্তরে এবং ধামইরহাট উপজেলা থেকে উত্তরে প্রায় ৫ কিলোমিটারের মধ্যে এই বনাঞ্চলের অবস্থান। এলাকাটি রাজশাহী সামাজিক বন বিভাগের ধামইরহাট উপজেলায় পাইকবান্ধা রেঞ্জের অধীন ধামইরহাট বিটের অধীন।

রাজশাহী বন বিভাগেরফরেস্টার আশরাফুল ইসলাম জানান, আলতাদিঘি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য গেজেটভুক্ত জলাশয়। সেখানে মাছ ধরাও নিষিদ্ধ। দেশি অনেক পাতিহাঁস সারা বছরই ওখানে থাকে। প্রচুর মাছ ও জলজ উদ্ভিদ রয়েছে। ওদের খাবারের অভাব হবে না। যেহেতু ওরা উড়ে যেতে পারবে না, তাই ওদের জন্য এর চেয়ে ভালো জায়গা আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

গত ২২ জানুয়ারি সকালে রাজশাহী পবা উপজেলারগহমাবোনা পদ্মার পাড়েদুটি বস্তার ভেতর থেকে ২৯টি পাখি উদ্ধার করা হয়। লাল ঠোঁট আর সাদা বুকে ফিতা পরা এই হাঁসের মাথা ও ঘাড়ে চকচকে সবুজ-কালোয় মেশানো মোহনীয় রং। যাতে উড়ে যেতে না পারে, সেই জন্য শিকারি ২৯টি পাখির অপরূপ পালকগুলো কেটে ফেলেছিলেন। পা বেঁধে দুটি বস্তার ভেতরে ভরে রাজশাহী শহরে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে আসছিল। পালক কাটার সময় ছুরির আঘাতে কেটে যাওয়া গা থেকে ঝরছিল রক্ত। সেই রক্ত পড়ছিল বস্তা চুইয়ে। রাজশাহীর বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের সদস্যরা রক্ত দেখে সন্দেহ করেন। শিকারিকে আটকাতে না পারলেও শেষ পর্যন্ত তাঁরা বস্তা দুটি থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় পাখিগুলো উদ্ধার করেন। এরপর থেকে পাখিগুলো রাজশাহীতে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখা হয়।

মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ানো এই পাখিগুলো বন্দী জীবনের প্রথম দুই দিন কিছুই খায়নি। ধীরে ধীরে তারা মানুষের দেওয়া খাবার খাওয়া শুরু করলেওউড়তে পারছে না। কেটে ফেলা পালক খুব ধীরে বাড়ছে। তাই এখন তারা শুধু পাখা ঝাপটাচ্ছে, কিন্তু উড়তে পারছে না। পুনর্বাসন কেন্দ্রে ছোট ছোট পানির হাউস তৈরি করে রাখা হয়েছে। তাতে ওঠার জন্য মই রাখা হয়েছে। এই মই বেয়ে তারা হাউসে উঠছে। কিন্তু তার ভেতর থেকে আর উড়ে ওপরে উঠতে পারছে না। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, ছেড়ে দিলেও তারা আপাতত নিজ ভূমিতে উড়ে যেতে পারবে না।

রাজশাহী চিড়িয়াখানার কিউরেটর ও ইনচার্জ ফরহাদ উদ্দিন জানান, গত দুই সপ্তাহ আগে তারা খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। এই খবর পেয়েই তিনি ছুটে যান। তিনি কিছু ওষুধ দেন। এরপর থেকে তারা আবার খাওয়া শুরু করেছে।

আজ সকালে এগুলো নিয়ে নওগাঁরআলতাদিঘির উদ্দেশে রওনা দেবেন রাজশাহীর বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সদস্যরা। এ কথা গতকাল দুপুরে জানান রাজশাহী বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির। দুপুর ১২টার দিকে নওগাঁ-২ (পত্নীতলা-ধামইরহাট) আসনের সাংসদ শহীদুজ্জামান সরকার আজ প্রধান অতিথি থেকে পাখিগুলো আলতাদিঘির জলে অবমুক্ত করবেন। ধামইরহাটের ইউএনওসহ উপজেলার অন্যান্য কর্মকর্তা ও গণমান্য ব্যক্তিরা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।