মুক্তিপণ না দেওয়ায় শিশু হত্যার অভিযোগ, ধানখেত থেকে লাশ উদ্ধার

আট বছরের ছেলেকে হারিয়ে মা শামসুন্নাহার বেগমের আহাজারি
ছবি: প্রথম আলো

নরসিংদীর রায়পুরার ধানখেত থেকে আট বছর বয়সী এক শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার উত্তর বাখরনগর ইউনিয়নের বাখরনগর গ্রাম থেকে ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই শিশুর মায়ের দাবি, গত ২৮ নভেম্বরের ইউপি নির্বাচনের দিন থেকে তাঁর ছেলেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।

নিহত ওই শিশুর নাম ইয়ামিন মিয়া (৮)। সে ওই গ্রামের মালয়েশিয়াপ্রবাসী জামাল মিয়ার ছেলে। সে স্থানীয় বাখরনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল।

নিহত শিশুর পরিবারের ভাষ্য, ২৮ নভেম্বর উত্তর বাখরনগর ইউপিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন থেকেই ইয়ামিনকে নিখোঁজ। পরদিন শামসুন্নাহার বেগমের মুঠোফোনে একটি কল আসে। ফোনের ওপাশ থেকে জানানো হয় তাঁর ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। ছেলেকে জীবিত ফেরত চাইলে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। এ ঘটনার পর শামসুন্নাহার বিষয়টি মৌখিকভাবে রায়পুরা থানা-পুলিশকে জানান। পরে ১ ডিসেম্বর তিনি থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

ইয়ামিনের মা শামসুন্নাহার বেগম জানান, অপহরণকারীরা প্রথমে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়েছিল, পরে অপহরণকারীদের সঙ্গে ৫ লাখ টাকায় মীমাংসা করেন তিনি। এরপর অপহরণকারীদের দেওয়া একটি বিকাশ নম্বরে এক লাখ টাকা পাঠান। ওই টাকা পাঠানোর পর থেকেই অপহরণকারীরা মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ করে দেন।

এদিকে নিখোঁজের বিষয়টি পুলিশকে জানানোর পর থেকে ওই শিশুকে খুঁজে বের করতে পুলিশ কাজ শুরু করলেও শিশুটির কোনো খোঁজ মেলেনি। এরপর আজ সকালে স্থানীয় লোকজন একটি ধানখেতে ওই শিশুর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের কাছে খবর পেয়ে শামসুন্নাহার বেগম ঘটনাস্থলে এসে শিশুটির পরনের কাপড় দেখে ইয়ামিনের লাশ শনাক্ত করেন। পরে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর আজ সকালে শিশুটির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

ইয়ামিন মিয়া
ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ জানায়, ধানখেতে ওই লাশ ফেলে দেওয়ার পর লাশের কিছু অংশ শিয়াল-কুকুর খেয়ে ফেলেছে। কবে ওই শিশুকে হত্যা করা হয়েছে, সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।

রায়পুরা থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. আতাউর রহমান জানান, মুক্তিপণের টাকা না পাওয়ায় ওই শিশুকে হত্যা করে অপহরণকারীরা লাশ ধানখেতে ফেলে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। নিখোঁজ শিশুর মায়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ কাজ শুরু করেছিল। ওই শিশুর মা তিনজন ব্যক্তিকে সন্দেহ করেন বলে পুলিশকে জানিয়েছিলেন। অপহরণকারীদের দ্রুত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।