মুক্তিযোদ্ধাকে কুপিয়ে জখম, ইউপি চেয়ারম্যান ও তাঁর স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার ৫

প্রতীকী ছবি

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ইটভাটার মালিক এক মুক্তিযোদ্ধাকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনা ঘটেছে। এই হামলার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মশিউর রহমান ওরফে শিমু মিরা ও তাঁর স্ত্রী সাবেক ইউপি সদস্য খাদিজা আক্তার এলিজাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে উপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে শাহ আলম হাওলাদার তাঁর মালিকানাধীন বিসমিল্লাহ ইটভাটার কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন। এ সময় সন্ত্রাসীরা রামদা দিয়ে তাঁকে কোপায়। সন্ত্রাসীদের রামদার কোপে তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়েছে। সন্ত্রাসীরা লাঠি দিয়েও তাঁকে বেধড়ক পেটায় বলে প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান।

সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে ও মারধর করে ফেলে রেখে যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজন আহত শাহ আলম হাওলাদারকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পাশের আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এরপর সেখান থেকে তাঁকে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। শাহ আলম হাওলাদার এখন সেখানেই চিকিৎসাধীন।

আজ দুপুরে গ্রেপ্তার পাঁচ আসামিকে উপজেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শোভন শাহরিয়ারের আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী আকলিমা বেগম বাদী হয়ে গতকাল রাতেই কলাপাড়া থানায় একটি মামলা করেছেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা সবাই ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। মামলা দায়েরের পর রাতেই পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে তৎপর হয়। গতকাল দিবাগত রাত দুইটার দিকে উপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রাম থেকে প্রধান আসামি টিয়াখালী ইউপির চেয়ারম্যান সৈয়দ মশিউর রহমান ও তাঁর স্ত্রী সাবেক ইউপি সদস্য খাদিজা আক্তার এলিজাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অপর তিন আসামি নেছার হাওলাদার, নাঈম ও ইমরান গাজীকে রাতের বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

কলাপাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আশাদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ইউপি চেয়ারম্যানসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি অপরাধীদের ধরতে পুলিশি তৎপরতা চলছে।’

আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর ইটভাটার ব্যবসা রয়েছে। স্থানীয় সন্ত্রাসীরা আমার বাবার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিল। এর পেছনে রয়েছেন টিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান শিমু মিরা ও তাঁর স্ত্রী এলিজা। একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও তিনি রেহাই পেলেন না। এ দুঃখ কার কাছে বলব?
মো. আবু সালেহ, আহত শাহ আলম হাওলাদারের ছেলে

আহত শাহ আলম হাওলাদারের ছেলে ও আমতলী উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আবু সালেহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর ইটভাটার ব্যবসা রয়েছে। স্থানীয় সন্ত্রাসীরা আমার বাবার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিল। চাঁদা না দিলে ব্যবসা করতে পারবে না বলে হুমকি দেয় ওই সন্ত্রাসীরা। এর পেছনে রয়েছেন টিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান শিমু মিরা ও তাঁর স্ত্রী এলিজা।’ তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও তিনি রেহাই পেলেন না। এ দুঃখ কার কাছে বলব?’

এদিকে গ্রেপ্তার ইউপি চেয়ারম্যান শিমু মিরার মুক্তির দাবিতে টিয়াখালী ইউপির ১, ৩, ৪, ৫ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যদের নেতৃত্বে চেয়ারম্যানের দুই শতাধিক সমর্থক কলাপাড়া পৌর শহরে আজ বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। একপর্যায়ে মিছিলকারীরা কলাপাড়া থানার সামনে গিয়েও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আজ দুপুরে গ্রেপ্তার পাঁচ আসামিকে উপজেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শোভন শাহরিয়ারের আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, আসামিদের ৭ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হবে। রিমান্ড শুনানি আগামী ৬ ডিসেম্বর হবে।