মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাইয়ে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগে

মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাইয়ে নামে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় কোটি টাকা অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। নতুন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ‘ক’ এবং ‘খ’ তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য একেকজনের কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক আবেদনকারী।

এসব অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার শরণখোলা প্রেসক্লাবের সামনে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ও অনলাইন আবেদনকারীর ব্যানারে মানববন্ধন করে মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ। এর আগে গত মঙ্গলবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করে তারা।

লিখিত অভিযোগ ও মানববন্ধনে অংশ নেওয়া কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা বলেন, তালিকা থেকে বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অনলাইনে আবেদনকারীদের যাচাই-বাছাই করতে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) ১০২ নম্বর স্মারকে শরণখোলায় পত্র পাঠায়। উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আফজাল হুসাইন, সদস্যসচিব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরদার মোস্তফা শাহিন ও সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ খালেক খান গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা বাছাই করেন।

বাছাই কমিটি ভারতীয় তালিকা, লাল মুক্তিবার্তা ও উপস্থিত সম্মুখযোদ্ধাদের সাক্ষী এবং সবার ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি খসড়া তালিকা প্রস্তুত করেন। কিন্তু ওই খসড়া তালিকা বাদ রেখে বাছাই কমিটি গোপনে ৩৪ জন অমুক্তিযোদ্ধা অন্তর্ভুক্ত করে ৫৩ জনের নাম তালিকাভুক্ত করে জামুকায় পাঠায় বলে অভিযোগ মানববন্ধনকারীদের।
মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত উদ্দিন বাদশা অভিযোগ করে বলেন, শরণখোলায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে। যাচাই-বাছাই কমিটির দুই সদস্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরব ভুলুণ্ঠিত করেছেন। কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রকে প্রতিষ্ঠা করতে তাঁরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ খান, আ. মালেক জোমাদ্দার, আবু জাফর জব্বার, ইউসুফ আলী হাওলাদার বলেন, যাচাই-বাছাই কমিটির দুই সদস্য অনলাইনে আবেদনকারী দেড় শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে তালিকায় অন্তর্ভুক্তির নামে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করেন।

উপস্থিত অনলাইনে আবেদনকারী সুনিল শিকারী অভিযোগ করে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির কথা বলে তাঁর কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়েও তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

আন্দোলনকারী মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে যে ৫৩ জনের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, তাঁদের ভেতর ৩৪ জনই অমুক্তিযোদ্ধা এবং এর মধ্যে কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধবিরোধীও রয়েছেন। এক নম্বর গেজেটের যাচাই-বাছাই করতেও ব্যাপক অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁদের।

জানতে চাইলে উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্যসচিব ও ইউএনও সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, ‘কমিটিতে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উপস্থিত সাক্ষীদের মতামতের ভিত্তিতেই তালিকা করে জামুকায় পাঠানো হয়েছে। যাঁরা অভিযোগ করছেন, যাচাই–বাছাইয়ের উন্মুক্ত শুনানিতে তাঁরাও ছিলেন। সরকার থেকে বলা হয়, সহযোদ্ধা হলেও হবে। মূলত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাক্ষরের ভিত্তিতেই তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। কেবল কাগজপত্রের ভিক্তিতে হলে আমরা কেবল দালিলিক শুদ্ধতা দেখে বাছাই করতে পারতাম। প্রকাশ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা যখন বলছেন উনি একটি যুদ্ধে আমাদের সঙ্গে ছিলেন, যুদ্ধ করেছেন; কিন্তু আমরা সব ক্ষেত্রে দলিল দিয়ে প্রমাণ করতে পারছি না। তবে কেউ যদি এখানে প্রভাবিত হয়ে থাকেন এবং তা প্রমাণিত হয়, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সরদার মোস্তফা শাহিন আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। এখন এ ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বাছাই কমিটির সভাপতি এম আফজাল হোসাইন ও সদস্য এম এ খালেক খান অর্থ বাণিজ্যের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘অভিযোগকারীদের নিয়েই ৫৩ জনের তালিকা করা হয়েছে। তাঁদের স্বার্থহানি ঘটায় এখন আমাদের নামে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।’