মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ার খবরে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু

সাহার আলী

পাশের গ্রামে মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার বাসিন্দা সাহার আলী (৮০)। সেখানে থাকা অবস্থায় তিনি ফোনে খবর পান—মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ পড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার সাহারপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সাহার আলীর বাড়ি একই উপজেলার নেউটা গোপাইডাঙ্গ গ্রামে। স্বজন ও সহযোদ্ধাদের দাবি, সাহার আলী একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতাও পেয়েছেন। তাঁর গেজেট নম্বর ৩০৩৪। জামুকার গঠিত যাচাই-বাছাই কমিটি তাঁর নাম বাদ দেওয়ায় তিনি তা সহ্য করতে পারেননি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই–বাছাই কমিটির সদস্যসচিব গণপতি রায় বলছেন, ‘যাচাই-বাছাই প্রতিবেদন প্রকাশের সঙ্গে এ মৃত্যুর কোনো যোগসূত্র নেই। তিনি একজন বয়স্ক ব্যক্তি। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। সাহার আলী গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মৃত্যুর পর তাঁকে সরকারের পক্ষ থেকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।’

সাহার আলী ছিলেন একজন প্রকৃত মৃক্তিযোদ্ধা। একজন মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া মুক্তিযোদ্ধার জন্য অপমানজনক এবং রাষ্ট্রের জন্যও এটা বিব্রতকর।
ফরমুদ হোসেন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) গঠিত কমিটির মাধ্যমে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলায় ৬ ফেব্রুয়ারি ৮৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়। এর প্রতিবেদন গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে প্রকাশ করা হয়। এতে ৫৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম বাতিল করা হয়। প্রতিবেদনটি সাঁটানো হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নোটিশ বোর্ডে। ওই তালিকায় সাক্ষী ও মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্য সঠিক নয় দাবি করে যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে সাহার আলীর (৮০) নাম বাতিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সাহার আলীর স্বজন সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে মেয়ের বাড়িতে থাকার সময় সাহার আলীকে উপজেলার একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফোন করেন। তিনি জানান, মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে সাহার আলীর নামটি বাদ পড়েছে। এ খবর শোনার পরপরই হঠাৎ করেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার ধামইরহাট ইউনিয়নের নেউটা গোপাইডাঙ্গা গ্রামে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয় সাহার আলীকে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউএনও গণপতি রায়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ফরমুদ হোসেন প্রমুখ।

সাহার আলীর ছেলে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার বাবা একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু জামুকা কর্তৃক বর্তমান যাচাই-বাছাই কমিটি তালিকা থেকে অন্যায়ভাবে তাঁর নাম বাদ দিয়েছে। তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ায় আমার বাবা প্রচণ্ড কষ্ট পেয়ে স্ট্রোক করে মারা গেলেন। আমার বাবার মৃত্যুর জন্য বর্তমান যাচাই-বাছাই কমিটিকেই আমি দায়ী করতে চাই।’

ধামইরহাট উপজেলার যুদ্ধকালীন কমান্ডার ফরমুদ হোসেন বলেন, সাহার আলী ছিলেন একজন প্রকৃত মৃক্তিযোদ্ধা। তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন এ ধরনের অনেক মুক্তিযোদ্ধা এখনো বেঁচে রয়েছেন। তাঁর নাম তালিকা থেকে কেন বাদ পড়ল, তা বুঝতে পারছেন না। একজন মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া মুক্তিযোদ্ধার জন্য অপমানজনক এবং রাষ্ট্রের জন্যও এটা বিব্রতকর।

ইউএনও গণপতি রায় বলেন, যাচাই-বাছাইয়ের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তা প্রাথমিক তালিকা। প্রাথমিক তালিকায় যাঁদের নাম বাদ পড়েছে, তাঁরা সংক্ষুব্ধ হলে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে আপিলের সুযোগ পাবেন। আপিল করলে তাঁদের অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করা হবে এবং তদন্ত কমিটি তাঁদের দাবির সত্যতা পেলে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তাঁদের নাম ওঠার সুযোগ রয়েছে।