মৃত্যুর ২৫ দিন পর জীবিত দেখিয়ে দলিল নিবন্ধন

মারা যাওয়ার ২৫ দিন পর এক নারীকে ‘জীবিত ও সশরীরে’ সাব-রেজিস্ট্রারের সামনে উপস্থিত দেখিয়ে হলফনামা করানোর পরে জমির দলিল নিবন্ধনের ঘটনা ঘটেছে। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত ওই নারীর এক ওয়ারিশ ওই দলিল বাতিল চেয়ে গত মাসে পটুয়াখালী আদালতে মামলা করেছেন। যিনি সম্পর্কে ওই নারীর চাচাতো ভাই।

ওই নারীর নাম রেহেনা বেগম (৫৭)। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে গত বছরের ৩ নভেম্বর তিনি মারা যান। অথচ তিনি ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর দলিল দিয়েছেন বলে সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি দাবি করছেন।

রেহেনা বেগম ছিলেন উপজেলার মদনপুরা ইউনিয়নের চন্দ্রপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর কোনো সন্তান নেই। ভাইও নেই। তাঁর স্বামীর নাম আলতাফ হোসেন। তিনিও ২০১১ সালে মারা যান। ওয়ারিশ সনদ অনুযায়ী তাঁর তিন চাচাতো ভাই জীবিত আছেন। তাঁরা হলেন চন্দ্রপাড়া গ্রামের মো. ফজলুল হক সিকদারের তিন ছেলে মো. আবুল হোসেন, এ কে এম শফিউল আলম ও মো. মামুন হোসেন।

আজ শনিবার দুপুরে সরেজমিনে মদনপুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কার্যালয়ে মৃত্যু রেজিস্ট্রার ও মৃত্যু সনদ অনুযায়ী দেখা গেছে, রেহেনা বেগম ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর মারা গেছেন। জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় বাসিন্দা ও তাঁর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেও এর সত্যতা যাচাই করা হয়েছে।

উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় থেকে দলিলের সইমোহর (নকলকপি) অনুযায়ী দেখা যায়, মোছা. রেহেনা বেগম নামের ওই নারী ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর একই উপজেলার ভরিপাশা গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে দুটি অছিয়তনামা দলিলে ৭৪ শতাংশ জমি নিবন্ধন করে দেন। এর মধ্যে ওই তারিখের ৬৯/২০১৯ নম্বরে দলিলে চন্দ্রপাড়া মৌজার ৫০ শতাংশ জমি ও ৭০/২০১৯ নম্বর দলিলে ভরিপাশার ২৪ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সাইফুলের বাবার নাম মো. আলমগীর হোসেন। তিনি ওই নারীর কোনো ওয়ারিশ নন।

জমির দলিল নিবন্ধনের নিয়মানুযায়ী দলিলদাতাকে সাবরেজিস্ট্রারের সামনে সশরীর উপস্থিত থেকে হলফনামা দেওয়ার পর জমি নিবন্ধন হয়। এমনকি দলিলেও জমিদাতার ছবিযুক্ত স্বাক্ষর থাকতে হয়।

সংশ্লিষ্ট মদনপুরা ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল কালাম বলেন, ‘রেহেনা বেগম যে ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর মারা গেছেন, তা এলাকার সবাই জানে। সে অনুযায়ী তাঁর স্বজনদের মৃত্যুসনদ দেওয়া হয়েছে। মারা যাওয়ার ২৫ দিন পর কীভাবে তিনি দলিল দিলেন, তা আমার বোধগম্য নয়। এমন জাল-জালিয়াতির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’ তিনি আরও বলেন, ওই নারীর কোনো সন্তান নেই। স্বামীও মারা গেছেন। ওয়ারিশ বলতে তিন চাচাতো ভাই মো. আবুল হোসেন, এ কে এম শফিউল আলম, মো. মামুন হোসেন জীবিত আছেন।

মো. মামুন হোসেন বলেন, ‘তিনি (রেহেনা) মারা যাওয়ার আগে আমরাই দেখভাল করতাম। তাঁর জমি আমারই ভোগ করতাম। সম্প্রতি জানতে পারি, ওই জমি তিনি সাইফুল নামে অন্য এক ব্যক্তিকে অছিয়তনামা দলিল দিয়েছেন। পরে খোঁজ নিয়ে দেখি মারা যাওয়ার ২৫ দিন পর দলিল দিয়েছেন। সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় থেকে ওই দলিলের সইমোহর (নকলকপি) উঠিয়ে দলিল বাতিল চেয়ে চলতি বছরের ২০ আগস্ট পটুয়াখালীর বাউফল সহকারী জজ আদালতে মামলা করেছি।’

এ বিষয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘রেহেনা বেগম জীবিত থাকাকালীন তাঁকে অছিয়তনামা দলিল দিয়েছেন। তিনি ৩ নভেম্বর মারা যাননি। মারা গেছেন ৫ ডিসেম্বর।’ এ–সংক্রান্ত কাগজ তাঁর কাছে আছে বলেও দাবি করেন।

সাব-রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে থাকা কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমার সময়ে হয়নি। আমি চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে দলিল নিবন্ধনের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি।’

বাউফলে ওই সময় দায়িত্বে থাকা সাব-রেজিস্ট্রার আবদুর রব বলেন, ‘জমিদাতাকে অবশ্যই সাব-রেজিস্ট্রারের সামনে উপস্থিত হতে হয়। কোনোভাবেই মৃত ব্যক্তির জমি বিক্রি করার সুযোগ নেই। কীভাবে হলো তা আমার বোধগম্য নয়।’ বর্তমানে আবদুর রব পিরোজপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত আছেন।