মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন মনিরুলসহ বিএনপির দুজন

মঙ্গলবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর পক্ষে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন তাঁর ভাই কাইয়ুমল হকছবি: এম সাদেক

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত দুজন। তাঁরা হলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল হক সাক্কু ও কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক নিজাম উদ্দীন কায়সার।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় মনিরুল হকের পক্ষে তাঁর ছোট ভাই মো. কাইমুল হক এবং দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নিজাম উদ্দীন নিজেই মনোনয়নপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আগামী ১৫ জুন এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপিতে দুটি ধারা। এক পক্ষে আছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক আমিন উর রশিদ। আরেক পক্ষে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও সিটি মেয়র মো. মনিরুল হক। ২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলনে মনিরুল দলের শীর্ষ পদ (সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক) পাননি। তাঁর অনুসারীরাও কোনো পদ পাননি। এর পর থেকে তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ দ্বন্দ্ব কখনো থাকে, কখনো নিরসন হয়।

এর মধ্যে ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি মনিরুল কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি থেকে অব্যাহতি নিয়ে নাগরিক কমিটির ব্যানারে মেয়র নির্বাচন করে জয়ী হন। ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ মনিরুল বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জয়ী হন। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তিনি কুমিল্লায় দলীয় কার্যক্রমে একেবারেই অনুপস্থিত ছিলেন। হরতালেও নগর ভবনে বসে অফিস করেছেন। কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর, সিটি করপোরেশন ও সেনানিবাস এলাকা) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালো। এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে দলীয় নেতা-কর্মীদের দূরত্ব বাড়ে। গত বছরের অক্টোবরে কেন্দ্রীয় বিএনপির এক সভায় অনুপস্থিত থাকায় মনিরুলকে কেন্দ্রীয় বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়। তবে জেলায় তাঁর পদ রয়েছে। এবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। এ অবস্থায় মনিরুল স্বতন্ত্র নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

মেয়র প্রার্থী মো. মনিরুল হক বলেন, ‘মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছি। দলীয় মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার পর দলের কাছে অব্যাহতি চাইব। নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার চলছে। আমি নির্বাচনে আছি, নির্বাচনে থাকব। তিন মাস ধরে আমি নির্বাচনী কাজ করেছি। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়েছি। দোয়া চেয়েছি। কেন্দ্র কমিটি করেছি। এখন প্রতীকের অপেক্ষায় আছি। উন্নয়নের জন্য ভোটাররা আমাকে ভোট দেবেন। কুমিল্লার মানুষই আমাকে চান।’ নিজাম উদ্দীন কায়সারের প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কায়সার ছোট ভাই, সে প্রার্থী হয়েছে। করুক নির্বাচন। আমি কী বলব!’

মেয়র পদে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নিজাম উদ্দীন। তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের আত্মীয়। জানতে চাইলে মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দীন কায়সার বলেন, ‘কুমিল্লার মানুষ পরিবর্তন চায়। পরিবর্তন করতে হলে নৌকা প্রতীক ও সাবেক মেয়রের বলয়ের বাইরে থেকে প্রার্থী হতে হবে। তাই আমি প্রার্থী হয়েছি। কুমিল্লার মানুষকে শান্তির ও নিরাপদ কুমিল্লা উপহার দিতে চাই।’

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার আজ মঙ্গলবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়ন পত্র জমা দেন
ছবি: এম সাদেক

এই দুজনের প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া বলেন, বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এখন যাঁরা নির্বাচন করার জন্য মাঠে রয়েছেন, মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন, তাঁদের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন কথা বলবে।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার ১৭ মে মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন। ১৯ মে মনোনয়নপত্র বাছাই। ২৬ মে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার। ২৭ মে প্রতীক বরাদ্দ। ১৫ জুন নির্বাচন হবে।