মেয়র ভাঙলেন পাউবোর এক শ ফুট সীমানাপ্রাচীর

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পর্যটনকেন্দ্রে পাউবোর জমির সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়
ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌরসভায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জমির অন্তত এক শ ফুট সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়েছে। পাউবোর কলাপাড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেনের অভিযোগ, কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার জোর করে সীমানাপ্রাচীরটি ভেঙে ফেলেছেন।

আরিফ হোসেনের অভিযোগ, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার সময় কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার পৌরসভার ১০-১২ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে নিয়ে পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় অবস্থিত পাউবোর জমির চারপাশের ইটের সীমানাপ্রাচীর ১০০ ফুটের মতো পেলোডার দিয়ে ভেঙে ফেলেছেন। পাউবোর প্রাচীরটির উচ্চতা ছিল ৫ ফুট।

পাউবোর কুয়াকাটা পর্যটনকেন্দ্রের ধানসিঁড়ি পরিদর্শন বাংলোর কর্মচারী মো. মাসুম মিয়া বলেন, ‘পাউবোর সীমানাপ্রাচীরে ঘেরা জমিটির সামনে হঠাৎ দেখি একটি পেলোডার এনে রাখা হয়েছে। তারপর দেখি, পৌরসভার ১০-১২ জন শ্রমিক-কর্মচারী এসে জড়ো হয়েছেন। এরপরই আসেন মেয়রসহ তাঁর ঘনিষ্ঠ লোকজন। তখন সকাল সাড়ে ৯টা বাজে। এরপর মেয়রের নির্দেশে পেলোডার দিয়ে সীমানাপ্রাচীরটি ভাঙার কাজ শুরু করা হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে প্রাচীর ভাঙার কাজ চলে। আমি নিষেধ করলেও তাঁরা আমার কোনো কথা শোনেননি। উল্টো মেয়র বলেছেন, এ জমি পাউবোর নয়।’

এদিকে পাউবোর সরকারি সম্পত্তির সীমানাপ্রাচীর ভাঙার খবর পেয়ে কলাপাড়া উপজেলা সদরে অবস্থিত পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিও) শওকত ইকবাল মেহেরাজ, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম এবং পাউবোর কলাপাড়া কার্যালয়ের কর্মকর্তা সৈয়দ তারিকুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

সৈয়দ তারিকুর রহমান বলেন, তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে মেয়র বা তাঁর কোনো লোকজনকে পাননি। তবে প্রাচীর ভাঙার কাজে ব্যবহৃত পেলোডার ঘটনাস্থলেই ছিল। মেয়র সীমানাপ্রাচীর ভেঙে পাউবোর কিছু জমি দখল করে তাতে স্থাপনা নির্মাণ করবেন অথবা অন্য কোনো কাজে জমিটি ব্যবহার করবেন বলে তাঁরা শুনেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বলেন, পাউবোর সরকারি এ সম্পত্তিতে ৫১ শতাংশ জমি আছে। এই জমির কিছু অংশ অবৈধভাবে দখল করার জন্য মেয়র সীমানাপ্রাচীর ভেঙেছেন। এই জমির মূল্য কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা। সীমানাপ্রাচীর ভেঙে কী করবেন, জানতে চাইলে মেয়র বলেছেন, এই জমিতে মোটারসাইকেলের স্ট্যান্ড করা হবে।

কলাপাড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো জনপ্রতিনিধি সরকারি সম্পত্তির এভাবে ক্ষতিসাধন করতে পারেন না। আমরা ইতিমধ্যে বিষয়টি পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। অসৎ উদ্দেশ্যে এবং অবৈধভাবে দখল করার জন্য মেয়র এমন কাজ করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

পাউবোর অভিযোগ প্রসঙ্গে কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘জমিটিতে ময়লা-আবর্জনা পড়ে ছিল এবং দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। দুর্গন্ধের কারণে ওই স্থান দিয়ে কেউ স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারে না। একটি পর্যটনকেন্দ্র এলাকায় এমন দুর্গন্ধময় পরিবেশ থাকতে পারে না। এ কারণে সীমানাপ্রাচীর কিছুটা ভেঙে ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগামী মাসে পর্যটন দিবস পালিত হবে। বিষয়টি সামনে রেখে আমি কুয়াকাটা পর্যটনকেন্দ্র এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজে হাত দিয়েছি।’

মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাকে কেউ এ ঘটনার কথা জানাননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’