মেয়রের বিরুদ্ধে ইউএনওকে গালাগাল, মারতে উদ্যত হওয়ার অভিযোগ

পাবনার বেড়া উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি ও উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা চলাকালে পৌরসভার মেয়র আবদুল বাতেনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ আনাম সিদ্দিকীকে গালাগাল ও মারতে উদ্যত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরে সভায় উপস্থিত অন্য সদস্যরা তাঁকে শান্ত করেছেন। সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ এবং আইনশৃঙ্খলা কমিটি ও উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় উপস্থিত জনপ্রতিনিধিরা মেয়র আবদুল বাতেনের ‘উগ্র আচরণের’ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে পৌর মেয়র বলেছেন, তিনি ইউএনওকে কিছুই বলেননি। ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তাঁকে হেয় করার চেষ্টা চলছে।

আবদুল বাতেন বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও পাবনা-১ আসনের সাংসদ শামসুল হকের ভাই। টানা ২১ বছর বেড়া পৌরসভার মেয়র পদে রয়েছেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে প্রায় তিন মাস আগে জেলা আওয়ামী লীগ তাঁকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।

জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ জানান, বেড়া উপজেলার কাজিরহাট ও নগরবাড়িতে দুটি বড় আমদানি-রপ্তানি ঘাট রয়েছে। বিগত সভায় ঘাট দুটি ইজারার বিষয়ে আলোচনা হয়। চলতি সভায় মেয়র আবদুল বাতেন ঘাট দুটি ইজারার বিষয়ে আগে থেকেই তৈরি করা একটি রেজল্যুশন ইউএনও আসিফ আনাম সিদ্দিকীকে অনুমোদনের জন্যে চাপ প্রয়োগ করেন। বিষয়টি নীতিমালাবহির্ভূত হওয়ায় ইউএনও অনুমোদন দিতে অস্বীকৃতি জানালে মেয়র আবদুল বাতেন ক্ষিপ্ত হতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি ইউএনও আসিফ আনাম সিদ্দিকীকে পেটাতে ওঠেন। সভায় উপস্থিত অন্য সদস্যরা তাঁকে শান্ত করেন। উপস্থিত অন্য সদস্যদের হস্তক্ষেপে মেয়র ইউএনও গায়ে হাত তুলতে পারেননি। তবে তাঁর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন বলে তিনি জানতে পেরেছেন।

জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলকে অবহিত করেছি। নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

সভায় উপস্থিত সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগরবাড়ি ঘাট ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা ও কাজিরহাট ঘাট ৭২ লাখ টাকায় ইজারা হয়। ফলে ঘাটটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েই এই বিরোধ তৈরি হয়। বেড়া উপজেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রিত ঘাট দুটি ইজারার বিষয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বাক্ষর করেন। কিন্তু ইউএনও স্বাক্ষর না করায় মেয়র ক্ষিপ্ত হন। তিনি চরম উত্তেজিত হয়ে অকথ্য ভাষায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে গালিগালাজ করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে চেয়ার থেকে উঠে ইউএনওর ওপর চড়াও হন। পরে সভায় উপস্থিত সদস্যরা তাঁকে শান্ত করেন।

এ প্রসঙ্গে ইউএনও আসিফ আনাম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। ঘটনার বিস্তারিত তিনি তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। এর চাইতে বেশি কিছু বলার নেই।

সভায় অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বেড়া উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন, পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ এম রফিকুল্লাহ, জাতসাখিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল হক, রূপপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাশেম, আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক, বেড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম প্রমুখ।

জানতে চাইলে পৌর মেয়র আবদুল বাতেন অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ঘাট দুটি নিয়ে মামলা চলছে। ইজারার টাকা থেকে বেড়াবাসী বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি বেড়ার মানুষের স্বার্থে সে কথাই বলেছেন। মানুষের স্বার্থ আদায়ের জন্য একটু জোরে কথা বলেন, এটাই তাঁর দোষ। ইউএনওর সঙ্গে তাঁর খুব ভালো সম্পর্ক। তিনি তাঁকে কিছুই বলেননি। ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তাঁকে হেয় করার চেষ্টা চলছে।