মেয়াদ শেষেও কাটাচেরা সড়ক, ভোগান্তি অসীম

ধুপইল থেকে লালপুর পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের কাজটি কিনে নেন নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের নেতা শরিফুল ইসলাম।

নাটোরের ধুপইল-লালপুর সড়কের কাজ নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে শেষ না হওয়ায় জনদুর্ভোগ বেড়েছে। সম্প্রতি সড়কের চং ধুপইল এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

এক মাস আগে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখনো সড়কের কাজ শেষ হয়নি। উল্টো কাটাচেরা করে রাখা সড়কে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। তার ওপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের মান নিয়ে অভিযোগ উঠেছে।

নাটোরের লালপুর উপজেলার ধুপইল থেকে লালপুর পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নকাজের দায়িত্ব পায় মেসার্স শহীদ ব্রাদার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের কাছ থেকে কাজটি কিনে নেন নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম ওরফে রমজান। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে প্রায় ২৪ কোটি টাকার এ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৮ মাসে।

কাজের মান নিয়ে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি এলজিইডির কেন্দ্রীয় মান নিয়ন্ত্রণ ইউনিটও অভিযোগ তুলেছে। তবে ঠিকাদার শরিফুল ইসলামের ভাষ্য, চুক্তির মেয়াদ ১৮ মাস থাকলেও তিনি ২ মাস দেরিতে কাজ শুরু করেন। আগামী অক্টোবর বা নভেম্বরে কাজ শেষ করবেন। এ ছাড়া নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি এবং ওই এলাকায় মাটি ও বালুর সংকট থাকায় কাজ শেষ করা যায়নি।

এলজিইডি নাটোর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে সরকারের আরসিআইপি প্রকল্পের অধীন পৌনে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে লালপুর উপজেলার ধুপইল থেকে আবদুলপুর হয়ে লালপুর পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৪৬ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের কাজ হাতে নেয় সরকার। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২২ সালের ২০ এপ্রিলের মধ্যে কাজ শেষ করার শর্ত ছিল। কোনোভাবেই কাজের মেয়াদ বাড়ানো যাবে না বলে কার্যাদেশে উল্লেখ ছিল। ২০২০ সালের ২৮ নভেম্বর উন্নয়নকাজের উদ্বোধন করেন নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম।

৪ জুন ধুপইল থেকে আবদুলপুর হয়ে বিলমাড়িয়া পর্যন্ত সড়কটির সম্প্রসারণকাজ ঘুরে দেখেন এই প্রতিনিধি। তখন সড়কের কোথাও কার্পেটিংয়ের কাজ করতে দেখা যায়নি। আবার ধুপইল থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার অংশে সড়ক সম্প্রসারণের কাজ শুরুর কোনো আলামত চোখে পড়েনি। ধুপইল হলদারপাড়ায় এক কিলোমিটার ব্যবধানে দুটি কালভার্ট ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে কালভার্ট দুটি পুনর্নির্মাণে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। চংধুপইল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের একপাশ প্রশস্ত করার জন্য গর্ত করে রাখা হয়েছে। পুরো গর্তে পানি জমে আছে। সামনে যেতেই চোখে পড়ল চারজন শ্রমিক বর্ধিত অংশের কাজ করছেন।

সড়কের পাশের মুদিদোকানদার কামাল হোসেন বলেন, ঈদের আগে কালভার্ট ভেঙে ফেলে ঠিকাদারের লোকজন চলে গেছেন। এতবড় একটা কাজ, কিন্তু খুবই অল্পসংখ্যক শ্রমিক কাজ করছেন। তাই হয়তো কাজ এগোচ্ছে না।

কাজের ধীরগতির পাশাপাশি গুণগত মান নিয়ে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ রয়েছে। তবে ঠিকাদার সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় তাঁরা প্রতিবাদ করতে পারছেন না বলে দাবি করেন। মাধবপুরের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, যেসব ইট ও বালু ব্যবহার করা হচ্ছে, তা খুবই নিম্নমানের।

কাজের মান নিয়ে এলজিইডি সদর দপ্তরও সন্তুষ্ট না। সদর দপ্তরের কেন্দ্রীয় মান নিয়ন্ত্রণ ইউনিটের কারিগরি দল ১৩ জানুয়ারি সড়ক উন্নয়ন এলাকা পরিদর্শন করে। পরিদর্শন শেষে চলতি বছরের মার্চ মাসে কারিগরি দল একটি প্রতিবেদন দেয়। ওই প্রতিবেদনে বেশ কিছু অনিয়মের বিষয় উঠে আসে।

অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদার শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কিছুটা দেরিতে কাজ শুরু করেছি। আমি এখন পর্যন্ত প্রকল্প বাবদ চার কোটি টাকা তুলেছি। আশা করছি, আগামী অক্টোবর বা নভেম্বরে কাজটি শেষ হবে। প্রকল্প এলাকায় বালি ও মাটি পাওয়া যাচ্ছিল না। এ ছাড়া নির্মাণসামগ্রীর দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় কাজ কিছুদিন বন্ধ ছিল।’

কাজের মান খারাপ হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সড়কের কাজ তো শতভাগ সঠিকভাবে করা যায় না। কেন্দ্র থেকে যেসব ত্রুটি ধরা হয়েছে, সেগুলো শুধরে নেওয়া হয়েছে।

এলজিইডি নাটোরের নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আনুমানিক ৬০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এলজিইডির কেন্দ্রীয় মান নিয়ন্ত্রণ ইউনিট সড়কটি পরিদর্শন শেষে বেশ কিছু ত্রুটির কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল। ঠিকাদারকে চিঠি দিয়ে এসব ত্রুটি সংশোধনের জন্য তাগাদা দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত বিল দেওয়ার আগে আবার কাজের মান যাচাই করা হবে।