মেয়াদোত্তীর্ণরা আঁকড়ে আছেন পদ

নয়টি উপজেলার মধ্যে আটটি ও দুটি পৌর কমিটির মেয়াদ নেই। জেলা কমিটির মেয়াদও শেষ। নেতাদের কেউ বিবাহিত ও বিদেশে আছেন। কমিটির কোনোটিতে অছাত্র ও বিতর্কিতরা পদ আঁকড়ে আছেন।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের লোগো

খুলনা জেলা ছাত্রলীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে প্রায় দুই বছর আগে। এর বাইরে নয়টি উপজেলার মধ্যে আটটি ও দুটি পৌরসভা কমিটিরও মেয়াদ শেষ। বর্তমানে এসব কমিটির সদস্যরা কাগজ–কলমে এখনো পদ আঁকড়ে আছেন। কমিটিগুলো বিলুপ্তও ঘোষণা করা হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা কর্মী হিসেবে কাজ করছেন বা পদ পাওয়ার প্রত্যাশায় নেতাদের সঙ্গে ঘুরছেন, তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতেই গতকাল সোমবার প্রতিষ্ঠার ৭৩তম বর্ষপূর্তি পালন করেছে খুলনা জেলা, উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগ। দীর্ঘদিন ধরে সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষ্ক্রিয় থাকায় গতকাল প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনও করতে পারেনি বটিয়াঘাটা উপজেলা ছাত্রলীগ। সাধারণ সম্পাদক একটি মামলার আসামি হয়ে বিদেশ গিয়েছেন বলে কর্মীদের মধ্যে কথা প্রচলিত আছে।

নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্য উপজেলা ও পৌরসভার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির কোনোটিতে অছাত্র, বিবাহিত ও বিতর্কিতরা পদ আঁকড়ে আছেন।

জেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১৭ সালে। এর আগের ১৫ বছর সম্মেলন হয়নি। ওই সম্মেলনে কাউন্সিলর ও তৃণমূলের মতামত ছাড়াই পারভেজ হাওলাদারকে সভাপতি ও ইমরান হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১০১ সদস্যের কমিটি হওয়ার কথা থাকলেও সম্মেলনের প্রায় ৬ মাস পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জেলা ছাত্রলীগের ২৩০ সদস্যের কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়।

রূপসা উপজেলার সর্বশেষ কমিটি গঠন করা হয় ২০০৯ সালে। বিলুপ্ত করা হয় ২০১৮ সালে। নতুন কমিটি গঠনের জন্য তখন জীবনবৃত্তান্ত চাওয়া হলেও এখনো কমিটি গঠন হয়নি।

এই কমিটির বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুজিত কুমার অধিকারী বলেন, এই কমিটির সভাপতি বিবাহিত। সাধারণ সম্পাদকেরও বিয়ের খবর প্রকাশ পেয়েছে। ফলে নীতিগতভাবে তাঁরা কমিটিতে থাকতে পারেন না। বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটিকেও জানানো হয়েছিল। কিন্তু ওই কমিটি এখনো আছে।

উপজেলা পর্যায়ে দাকোপের আংশিক কমিটি ঘোষিত হয় গত ৩০ ডিসেম্বর। এর আগে ২০১৭ সালে ঘোষিত আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক স্বর্ণদ্বীপ জোয়ারদার হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় তাঁকে ২০১৮ সালে বহিষ্কার করা হয়। ওই কমিটিও আংশিক অবস্থা ছিল। ২০১৯ সালের ২ জুন কয়রা উপজেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। নতুন কমিটি কাজ শুরুর ২২ দিনের মাথায় তা বাতিল হয়। পরে শরিফুল ইসলামকে সভাপতি ও হাদিউজ্জামান রাসেলকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষিত হয়।

গত ২ মার্চ একটি সেতু নির্মাণকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে গুরুতর আহত হয়ে রাসেল মারা যান। বর্তমানে চার সদস্য দিয়ে কমিটি চলছে। এই উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও ছয়টি কলেজ শাখা কমিটির মেয়াদ চার থেকে পাঁচ বছর।

রূপসা উপজেলার সর্বশেষ কমিটি গঠন করা হয় ২০০৯ সালে। বিলুপ্ত করা হয় ২০১৮ সালে। নতুন কমিটি গঠনের জন্য তখন জীবনবৃত্তান্ত চাওয়া হলেও এখনো কমিটি গঠন হয়নি।

২০১৮ সালে মেয়াদ শেষ হয় ১৪ সদস্যের ডুমুরিয়া উপজেলা কমিটির। সভাপতি আবুল বাশার খানের কেলেঙ্কারির তথ্য, চিত্র ও কল রেকর্ড ভাইরাল হয়। এ নিয়ে তদন্ত কমিটি করা হলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

আগামী দুই–তিন মাসের মধ্যে বাকি উপজেলা এবং কলেজগুলোর কমিটি দিয়ে জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
পারভেজ হাওলাদার, সভাপতি, খুলনা জেলা ছাত্রলীগ

ফুলতলা উপজেলা কমিটি ঘোষিত হয় ২০১৬ সালে। এখনো তা পূর্ণাঙ্গ হয়নি। পাইকগাছায় সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১০ সালে। আংশিক কমিটি ঘোষিত হয় ২০১৭ সালে। তেরখাদায় ২০১৯ সালে আংশিক আহ্বায়ক কমিটি হয়। কেলেঙ্কারির অভিযোগে সদস্যসচিব আশিকুজ্জামানকে অব্যাহতি দেয় সংগঠনটি। দিঘলিয়ার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির এক শীর্ষ নেতা বর্তমানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন।

মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিষয়ে খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পারভেজ হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, আগের কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বিদায়ের আগে বিভিন্ন উপজেলায় প্রেস কমিটি দিয়ে যান। এ জন্য জেলা কমিটি ও ওই সব উপজেলা কমিটির বয়স প্রায় একই। পরে করোনাকাল চলে আসে। ফলে নতুন বা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা যায়নি।

পারভেজ আরও বলেন, এরপরও ১১টি কলেজ ও ২টি উপজেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী দুই–তিন মাসের মধ্যে বাকি উপজেলা এবং কলেজগুলোর কমিটি দিয়ে জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।