মোংলা বন্দরে অভ্যন্তরীণ খনন শুরু, ব্যয় হবে ৭৯৩ কোটি টাকা

মোংলা উপজেলার জয়মনির ঘোল নামের স্থানে পশুর নদে ড্রেজিং কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী
ছবি: প্রথম আলো

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলার সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বন্দর জেটিতে নির্বিঘ্নে জাহাজ আগমন নিশ্চিত করতে ইনার বার ড্রেজিংয়ের (অভ্যন্তরীণ খনন) উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার জয়মনির ঘোল নামের স্থানে পশুর নদে ড্রেজিং কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

‘মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বার ড্রেজিং’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৭৯৩ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে বন্দর জেটি থেকে জয়মনির ঘোল পর্যন্ত প্রায় ১৯ কিলোমিটার খনন করা হবে। এর ফলে ৯ দশমিক ৫০ মিটার থেকে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ মোংলা বন্দর জেটিতে সরাসরি প্রবেশ করতে পারবে। বর্তমানে বন্দর জেটিতে মাত্র ৭ মিটার গভীরতার জাহাজ আসতে পারে। চীনা কোম্পানি জেএইচসিইসি এবং সিসিইসিসি এই প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে ড্রেজিংয়ের কাজ পেয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় বন্দরের পশুর চ্যানেলের জয়মনির ঘোল থেকে বন্দর জেটি পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার ইনার বার খনন করা হবে। এতে বন্দরের নাব্যতা–সংকট নিরসন হবে জানিয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, এর ফলে মোংলা বন্দর কার্যত চট্টগ্রাম বন্দরের বিকল্প বন্দর হিসেবে পরিণত হবে। গুরুত্বপূর্ণ এই কর্মযজ্ঞ শেষ হলে মোংলা বন্দরের গতিধারা আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসার সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী।

ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলার জন্য প্রায় ১ হাজার ৫০০ একর জমির প্রয়োজন হবে। পশুর নদীর তীরবর্তী অল্প গভীরতাসম্পন্ন প্রায় ৫০০ একর জমিতে জিওটেক্সটাইল টিউব দ্বারা ডাইক নির্মাণ করে মাটি ফেলা হবে।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আ ন ম ফয়জুল হক, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার ও মেরিন) ক্যাপ্টেন এম আবদুল ওয়াদুদ তরফদার, সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) মো. ইমতিয়াজ হোসেন, পরিচালক (প্রশাসন) মো. গিয়াস উদ্দিন, ইনার বার ড্রেজিং প্রকল্পের পরিচালক শেখ শওকত আলী প্রমুখ।

প্রকল্প সূত্র বলছে, রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বঙ্গোপসাগরের ফেয়ারওয়ে বয়া পর্যন্ত বন্দর চ্যানেলের মোট দৈর্ঘ্য ১৪৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে মোংলা বন্দর জেটি থেকে হারবারিয়া (জয়মনির ঘোল) পর্যন্ত প্রায় ১৯ কিলোমিটার ইনার বার হিসেবে চিহ্নিত। ইনার বার চ্যানেলের বর্তমান গভীরতা ৫ দশমিক ৫ মিটারের কম। বর্তমান এই গভীরতায় জোয়ারের সুবিধা নিয়ে সর্বোচ্চ ৭ থেকে ৭ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ জেটিতে আসতে পারে।

২০২২ সালে জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদকাল। খনন করা পলিমাটি ও বালু রাখার জন্য মোংলার জয়মনি ও চিলা এলাকায় জমি লিজ নেওয়া হবে
ছবি: প্রথম আলো

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলার জন্য প্রায় ১ হাজার ৫০০ একর জমির প্রয়োজন হবে। পশুর নদীর তীরবর্তী অল্প গভীরতাসম্পন্ন প্রায় ৫০০ একর জমিতে জিওটেক্সটাইল টিউব দ্বারা ডাইক নির্মাণ করে মাটি ফেলা হবে। এ ছাড়া ব্যক্তিমালিকানাধীন এক হাজার একর জমিতে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ প্রদান করে মাটি ফেলা হবে।

ব্যক্তি মালিকানাধীন ১ হাজার একর জমির মধ্যে ইতিমধ্যে মোংলা উপজেলায় ৭০০ একর জমি হুকুমদখল নেওয়া হয়েছে। তবে দাকোপ উপজেলার বাণিশান্তা, খাজুরা, আমতলা এবং ভোজনখালি গ্রামের ৩০০ একর কৃষিজমির বিষয়ে জমির মালিকদের আপত্তি রয়েছে বলে জানা যায়। দাকোপ উপজেলায় জমি না পাওয়া গেলে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের জমিতে উঁচু করে মাটি ফেলা হতে পারে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল ও হাইড্রোলিক) ও ইনার বার ড্রেজিংয়ের প্রকল্প পরিচালক শেখ শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের রাজস্ব খাত থেকে খনন প্রকল্পের এই ব্যয় হবে। আগামী বছর ২০২২ সালে জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদকাল। খনন করা পলিমাটি ও বালু রাখার জন্য মোংলার জয়মনি ও চিলা এলাকায় জমি লিজ নেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রকল্পটির জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ইআইএ (এনভায়রনমেন্ট ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট) বা ‘পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন’ নেওয়া হয়েছে। তাদের সুপারিশগুলো অনুসরণ করে খনন করা মাটি ফেলা হবে।