মৌ চাষে ছফির উদ্দিনের মুখে মধুর হাসি

মৌ চাষ করে সফল হয়েছেন ছফির উদ্দিন
ছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে অন্তত পাঁচ হাজার লিচুগাছ রয়েছে। এ গ্রামের প্রতিটি বাড়ির উঠান, বাড়ির সামনের অংশ, পুকুরপাড়, খেতের আলসহ সব জায়গায় লিচুগাছ আছে। তাই গ্রামটি ‘লিচু গ্রাম’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

গ্রামের প্রতিটি গাছ এখন লিচুর মুকুলে ভরে গেছে। এমন কয়েকটি গাছের নিচেই মৌ চাষের বাক্স বসিয়েছেন মৌচাষি ছফির উদ্দিন। এতে মৌমাছির মাধ্যমে ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হচ্ছে। ফলে এক দিকে যেমন লিচুর উৎপাদন বাড়ছে, অন্য দিকে মধু চাষের মাধ্যমে বাড়তি আয় করা যাচ্ছে। সমন্বিত এ চাষে লিচুচাষি ও মৌচাষি দুজনেই লাভবান হচ্ছেন।

ছফির উদ্দিন পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু পড়ালেখার ফাঁকে শখের বসেই মধু ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি এখন ওই এলাকায় সফল মৌ খামারি হয়ে উঠেছেন।

পাকুন্দিয়ার মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে মো. ছফির উদ্দিন (৩০)। দুই ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে ছফির উদ্দিন ষষ্ঠ। ২০১১ সালে মঙ্গলবাড়িয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে তিনি আলিম পাস করেছেন। আলিম পরীক্ষার পর মধু বেচাকেনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এভাবে মধু কেনাবেচা করতে করতে মৌ চাষ সম্পর্কে ধারণা নিয়ে নেন। পরে তিনি স্বল্প পরিসরে মৌ চাষ শুরু করেন।

ছফির উদ্দিন বলেন, শুরুতে তিনি ১০টি বাক্স দিয়ে মৌ চাষ শুরু করেছিলেন। এরপর দ্রুত লাভের মুখ দেখায় বাক্সের সংখ্যা বাড়াতে শুরু করেছেন তিনি। বর্তমানে তাঁর ৫০টি বাক্স হয়েছে। প্রতিটি বাক্সে মধু সংগ্রহের জন্য আটটি মৌচাক রয়েছে। আছে একটি করে রানি মৌমাছি।

১০টি বাক্স দিয়ে শুরু করলেও ছফির এখন ৫০টি বাক্সে মৌ চাষ করছেন
ছবি: প্রথম আলো

সম্প্রতি ছফির উদ্দিনের মঙ্গলবাড়িয়া মৌ খামারে ঢুকতেই মৌমাছির ভন ভন শব্দ কানে ভেসে এল। সারিবদ্ধভাবে সাজানো মৌমাছির বাক্স। ছফির উদ্দিন তখন মৌমাছির পরিচর্যায় ব্যস্ত।

ছফির উদ্দিন বলেন, শুরুতে মৌ চাষের পদ্ধতি বুঝতে তাঁর অনেক সময় লেগেছে। প্রথমে খুব বেশি লাভ হয়নি। তবে তিনি ধৈর্য ধরে মৌমাছির আচরণ বোঝার চেষ্টা করেছেন। অবশেষে মৌ চাষ করেই তিনি নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। লিচুর মৌসুম ছাড়া অন্যান্য সময়ে তিনি শর্ষে, কালিজিরা ও ধনের মধু চাষ করেন।

সপ্তাহখানেক পরই ছফির মধু আহরণ শুরু করবেন। ৫০টি বাক্স থেকে তিনি এক টন লিচুর মধু সংগ্রহের আশা করছেন। এতে তাঁর চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা আয় হবে বলে জানিয়েছেন।

পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, পাকুন্দিয়া মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে অসংখ্য লিচুগ্রাছ রয়েছে। এখন প্রতিটি লিচুগাছ মুকুলে ভরপুর। মৌমাছিরা লিচু ফুলে বসে মধু সংগ্রহ করে। এতে ফুলে সহজে পরাগায়ন ঘটে। তাই লিচুবাগানের পাশে মৌ চাষের বাক্স স্থাপন করায় লিচুর ফলন বাড়ার পাশাপাশি মৌচাষিরাও মধু আহরণ করে লাভবান হচ্ছেন। এ কাজে তাঁরা চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন।