যতই বিধিনিষেধ থাকুক, সিঁদুর খেলায় ছাড় নেই

দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর সিঁদুর খেলায় মেতেছেন বধূরা। ঠাকুরগাঁওয়ের হলপাড়া দুর্গাবাড়ি মন্দিরে
প্রথম আলো

দিকে দিকে দেবী দুর্গার বিদায়ের সুর। অবিরাম ঢাকের বাদ্য, শঙ্খ আর উলুধ্বনির মধ্যে চলছে সিঁদুর উৎসব। সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীদের ভিড় উপচে পড়ছে মণ্ডপে। দেবীর চরণে ভক্তি নিবেদন শেষে তাঁরা একে অন্যকে সিঁদুর পরাচ্ছেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বিধিনিষেধ থাকলেও ঠাকুরগাঁওয়ের হলপাড়া দুর্গাবাড়ি মন্দিরে এমন হাসি-উচ্ছলতায় ভরা আনন্দঘন পরিবেশের দেখা মেলে।

বিজয়া দশমী তিথিতে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানো ও সিঁদুর উৎসবের মধ্য দিয়ে সোমবার শেষ হলো বাঙালি হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। ভক্তারা জানিয়েছেন, দুর্গাপূজার সর্বশেষ আনুষ্ঠানিকতায় ছিল দর্পণ বিসর্জন। দেবী দুর্গার সামনে একটি জলভর্তি পাত্রে আয়না রেখে তাতে মায়ের প্রতিচ্ছবি আনা হয়। আর এর মধ্য দিয়েই শেষ হয় শাস্ত্রমতে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। দর্পণ বিসর্জনের পর মন্দিরে শুরু হয় সিঁদুর উৎসব। হিন্দু নারীরা মায়ের পায়ে সিঁদুর দিয়ে তাঁদের ভক্তি জানান। এরপর মেতে ওঠেন সিঁদুর খেলা আর মিষ্টিমুখ করানোর উৎসবে। মন্দির প্রাঙ্গণে তখন চলে বাঁধভাঙা আনন্দ।

সোমবার দুপুরে মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, তেল-সিঁদুর পরিয়ে, পান, মিষ্টি মুখে দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাতে ব্যস্ত ভক্ত ও অনুরাগীরা। এরপর তাঁরা একে অপরকে সিঁদুর মাখিয়ে দেন। সে সময় তাঁরা মেতে ওঠেন নানা খুনসুটি। বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি দেবীমূর্তির সামনে মুঠোফোনে সেলফি তুলতেও দেখা গেল অনেককে।

মণ্ডপে কথা হয় হলপাড়ার বাসিন্দা সুমা সাহার সঙ্গে। তিনি জানান, এই রীতির অন্যতম গুরুত্ব হলো, আয়স্থরা (সধবা) তাঁদের সিঁদুরের স্থায়িত্ব, অর্থাৎ স্বামীর দীর্ঘ জীবন কামনার উদ্দেশ্যেই এই সিঁদুর খেলা খেলে থাকেন। তাই যতই করোনাভাইরাসের কারণে এবারের দুর্গাপূজায় বিধিনিষেধ থাকুক না কেন, সিঁদুর খেলায় ছাড় নেই। ঘোষপাড়ার বাসিন্দা রমা ঘোষ বলেন, ‘দেবী দুর্গার জন্য একটা বছরের অপেক্ষা করতে হবে। তাই এই কঠিন সময়েও আনন্দ ভাগাভাগি করতে চাই আমরা।’


বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ ঠাকুরগাঁও জেলার সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ জানান, হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী এ বছর দেবী দুর্গা মর্ত্যে এসেছেন দোলায় চড়ে। কৈলাসে ফিরে যাচ্ছেন গজে (হাতি) চেপে। মা দোলায় এলে দেখা দেয় মড়ক। আবার গজে গমন করলে পৃথিবীতে জলের সমতা বজায় থাকে এবং শস্যের ফলন ভালো হয়। সুখ-সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ থাকে মর্ত্যভূমি। মায়ের চরণে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে তাঁরা প্রার্থনা করেছেন, যেন জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব মানুষের মঙ্গল করেন।