যমুনার ঢলে ফসল হারিয়ে দিশাহারা কৃষক

যমুনার বন্যায় ঘর-দুয়োর ডুবে গিয়েছিল কুলসুম বেগমের । সঙ্গে ভিজে গেছে বীজ হিসেবে রাখা প্রায় ৩০ কেজি পেঁয়াজ । রোববার বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার খাটিয়ামারী চরে
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদীর দলিকার চরের প্রান্তিক কৃষক ফজল শেখ। এবার ধারদেনা করে আট বিঘা জমিতে পাট আর তিন বিঘা জমিতে আউশ ধান চাষ করেছিলেন। খেত থেকে পাট কাটার কথা ছিল কিছুদিন পরে। ফজল শেখ ভেবেছিলেন, খেতের পাট বিক্রির টাকায় দায়দেনা শোধ করবেন। আর ধান কেটে সংসারের ছয় মাসের ভাত জোগাবেন। কিন্তু যমুনা নদীর ঢলে তাঁর স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে।

এক সপ্তাহ ধরে খেত পানিতে তলিয়ে ছিল। ঢলের পানি নেমে যাওয়ার পর জেগে উঠেছে খেত। তবে খেতের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ফসল হারিয়ে এখন নিঃস্ব ফজল। দায়দেনা কীভাবে শোধ করবেন, পরিবারের সদস্যদের জন্য ভাত কীভাবে জোগাবেন, সেই ভাবনায় দিশাহারা অবস্থা তাঁর।

গতকাল শনিবার যমুনা নদীর দুর্গম চর দলিকা, হাটবাড়ি, শিমুলতাইড়, খাটিয়ামারি, পাঁচগাছি, সুজায়েতপুর, নয়াপাড়া, দীঘাপাড়া ও বেনীপুর চর ঘুরে দেখা গেছে, পানি নামতে শুরু করেছে। জেগে উঠছে বন্যার কারণে সৃষ্টি হওয়া ক্ষতচিহ্ন। বেরিয়ে আসছে বিধ্বস্ত আধা পচা পাটখেত। কৃষকেরা সেই পাট কেটে নদীর কিনারে জাগ দেওয়ার কাজে ব্যস্ত।

পূর্ব সুজায়েতপুর চরের বর্গাচাষি ওয়ারেছ ব্যাপারী বলেন, ‘পাঁচ বিঘার বর্গা জমিনত পাট আর দুই বিঘাত ধান আচলো। দশ দিন থ্যাকে পানিবন্দী। খ্যাতের পাট, জমিনের ধান বানের ঢলত সব শ্যাষ।’ প্রমত্ত যমুনার দিকে আঙুল উঁচিয়ে বলেন, ‘ওই যে গাঙটা দেকিচ্চেন, উটি ধনার চর আচলো। সেই চরত বসতঘর আচলো। সহায়–সম্বল লিয়ে উঠনু সুজায়েতপুর চরত। সেটিও এইবার বানের হানা। টিনের বেড়ার ঘর তোলা লাগবি, হাত খালি, টেকা নাই। জমিনত পাট, আউশ ধান বানত সব শ্যাষ।’

দীঘাপাড়া চরে খেত থেকে আধা পচা পাট কাটছিলেন রেজিনা বেগম। সঙ্গে তাঁর স্বামী ও ১৪ বছর বয়সী ছেলে। রেজিনা বেগম বলেন, অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ধারদেনা করে এবার সাত বিঘা জমিতে পাট ও ধান চাষ করেছিলেন। বানের পানি নেমে যাওয়ার পর দেখেন পাট অনেকটা পচে গেছে। এর দাম পাবেন না। তারপরও এটাই শেষ সম্বল।

কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, যমুনার ঢলে ২ হাজার ৭৮৯ হেক্টর জমির ফসল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার হেক্টর পাটের ফসল রয়েছে। কৃষকেরা বলছেন, বিঘাপ্রতি ১২ মণ পাটের ফলন এবং প্রতি মণ পাটের বাজারমূল্য ২ হাজার টাকা ধরে ক্ষতি প্রায় ৩০ কোটি টাকা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল হালিম বলেন, যমুনার ঢলে পাট, রোপা আউশ ছাড়াও হরেক জাতের ফসল তলিয়ে গেছে। পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর ফসলের ক্ষতির সঠিক পরিমাণ কত, তা জানা যাবে।