যমুনার পানিতে তলিয়ে গেছে চরের শত শত বিঘা বাদামের খেত

যমুনায় পানি বেড়ে ডুবে যাওয়া জমির আধা পাকা বাদাম তুলে এনেছেন কৃষকেরা। আজ বৃহস্পতিবার পাবনার বেড়া উপজেলার কাজীরহাট এলাকায়। ছবি: বরুন রায়
যমুনায় পানি বেড়ে ডুবে যাওয়া জমির আধা পাকা বাদাম তুলে এনেছেন কৃষকেরা। আজ বৃহস্পতিবার পাবনার বেড়া উপজেলার কাজীরহাট এলাকায়। ছবি: বরুন রায়

পাবনার বেড়া উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলের শত শত বিঘা বাদামখেত তলিয়ে গেছে। এসব স্থানে বাদামচাষিরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তলিয়ে যাওয়া বাদাম তোলার চেষ্টা করছেন। আবার কোনো কোনো স্থানে চাষিরা তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে আধা পাকা বাদামও তুলে ফেলছেন। সব মিলিয়ে বাদাম চাষে চরম লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় ও কৃষকদের সূত্রে জানা গেছে, বেড়ার চরাঞ্চলে প্রতিবছর প্রচুর বাদামের আবাদ হয়ে থাকে। এবার উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ১ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে বাদামের আবাদ করা হয়েছে। আর দু-এক সপ্তাহের মধ্যেই বাদাম কৃষকদের ঘরে ওঠার কথা। আবাদ করা বেশির ভাগ জমির বাদাম এখনো পুরোপুরি পুষ্ট না হয়ে আধা পাকা অবস্থায় রয়েছে।

কৃষকেরা জানান, জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে প্রায় এক মাস ধরে কৃষকেরা চরের বালুমিশ্রিত জমিতে বাদাম আবাদ করে থাকেন। আর সেই বাদাম জমি থেকে তোলা শুরু হয় মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে। সাধারণত জুনের শেষ সপ্তাহের মধ্যে সব বাদাম কৃষকের ঘরে উঠে যায়।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, তিন দিন ধরে যমুনার পানি দ্রুত বাড়ছে। এরই ফলে চরাঞ্চলের বাদামের খেত তলিয়ে যাচ্ছে। কৃষকেরা জানান, তাঁরা ঈদের পর জমি থেকে বাদাম তোলার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই উঠতি বাদাম তলিয়ে যাওয়ায় তাঁরা চরম বিপাকে পড়েছেন। ঠিক এই সময়েই আবার শ্রমিকসংকটও দেখা দিয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক স্থানেই চাষিরা পরিবারের নারী, শিশুসহ সব সদস্যকে নিয়ে ডুবে যাওয়া বাদাম তুলছেন। কিন্তু এভাবে বাদাম তোলার পর অর্ধেক ফলনও পাওয়া যাচ্ছে না। এর ওপর বেশির ভাগ ডুবে যাওয়া জমি থেকে বাদাম তোলা সম্ভবও হচ্ছে না।

আজ বৃহস্পতিবার উপজেলার মাসুমদিয়া, রূপপুর, হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, বাদামের অনেক খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। সেসব জমি থেকে কৃষক পরিবারের নারী, শিশুসহ সব সদস্য মিলে বাদাম তুলছেন। আবার কোথাও কোথাও তাঁরা জমি থেকে তোলা বাদামগাছ থেকে বাদাম ছাড়াচ্ছেন।

রূপপুর ইউনিয়নের দড়িশরীফপুর গ্রামের বাদামচাষি লিয়াকত আলী জানান, তিনি ৯ বিঘা জমিতে বাদামের আবাদ করেছিলেন। আর দুই সপ্তাহ জমিতে থাকলেই সব বাদাম পুরোপুরি পুষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু যমুনার পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় তাঁর চার বিঘা জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। বাকি জমিও তলিয়ে যাওয়ার মুখে রয়েছে। তিনি জানান, তলিয়ে যাওয়া কিছু জমি থেকে তিনি বাদাম তুললেও তাতে এক–চতুর্থাংশ বাদামও মিলবে না। তাঁর জমির আশপাশে ৬০ থেকে ৭০ বিঘা বাদামখেত তলিয়ে গেছে বলে তিনি জানান।

কাজীরহাট লঞ্চঘাটে গিয়ে কথা হয় ঘাটে ভিড়ে থাকা একটি লঞ্চের চালক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই লঞ্চঘাটের আশপাশে প্রচুর বাদামের খেত। এসব খেত তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের দুরবস্থা দেখে আমরা লঞ্চের কর্মীরা মিলে গত দুদিনে প্রচুর বাদাম তুলে দিয়েছি। করোনার কারণে লঞ্চ বন্ধ থাকায় কৃষকদের সাহায্য করছি।’

বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মশকর আলী বলেন, যমুনায় পানি বাড়ায় বেশ কিছু বাদামের খেত তলিয়ে গেছে। তিনি সরেজমিনে দেখে এলেও তলিয়ে যাওয়া জমির পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। শিগগিরই জমির পরিমাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হবে।