যমুনার ২০০ মিটার বাঁধে ধস, গ্রামবাসী আতঙ্কে

যমুনার ভাঙনে ধসে যাচ্ছে বাঁধ। আজ রোববার সকালে, মুরাদাবাদ গ্রাম, ইসলামপুর, জামালপুর। ছবি: প্রথম আলো
যমুনার ভাঙনে ধসে যাচ্ছে বাঁধ। আজ রোববার সকালে, মুরাদাবাদ গ্রাম, ইসলামপুর, জামালপুর। ছবি: প্রথম আলো

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার মুরাদাবাদ গ্রামে ২২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪টি স্থানে ২০০ মিটার ধসে গেছে। গত শুক্রবার এই ধস নামা শুরু হয়। আজ রোববার পর্যন্ত চারটি স্থান ধসে যায়। এর ফলে গ্রামবাসী বড় ধরনের ভাঙনের আশঙ্কা করছে।

আজ সকালে মুরাদাবাদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ঘাট থেকে প্রায় ৭০০ মিটার দূরেই বাঁধ ধসে গেছে। কিছু দূর পরপর ভাঙন। প্রায় ২০০ মিটার এলাকায় কংক্রিটের সিসি ব্লক পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভাঙনকবলিত স্থানে বালুভর্তি জিও ব্যাগও ফেলা হয়েছে। পানির তোড়ে সেসব সরে যাচ্ছে।

মুরাদাবাদ গ্রামের আজগর আলী বলেন, গত কয়েক দিনের মধ্যেই চারটি স্থান এভাবে ভেঙে গেল। গত বছরও ঠিক এই সময়ে মুরাদাবাদ এলাকায় ৩টি স্থানে প্রায় ২০০ মিটার বাঁধ ভেঙে যায়। এখানে পানির স্রোত অনেক বেশি। তাই বারবার একই স্থানে ভাঙন দেখা দিচ্ছে। আগের ভাঙনকবলিত স্থানেও সিসি ব্লক সরে গেছে। ভাঙনকবলিত স্থানে জিও ব্যাগ ফেলা রয়েছে। তবে তা-ও ঝুঁকিমুক্ত নয়। দ্রুত এসব ভাঙা স্থান শক্ত করে মেরামত করার দরকার। না হলে গ্রামের মানুষের সর্বনাশ হয়ে যাবে।

একই গ্রামের জুলফিকার আলী বলেন, বাঁধটি পশ্চিম ইসলামপুরবাসীর জন্য আশীর্বাদ ছিল। বাঁধ নির্মাণের আগে সারা বছর যমুনার ভাঙন ছিল। বন্যায় গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হতো। গ্রামবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাঁধটি নির্মিত হয়। এরপর থেকে কয়েক বছর ভাঙনে বাঁধটি বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের শিকার হয়। ২০১৮ সালের বন্যায় কয়েকটি স্থানে ভেঙে যায়। গ্রাম প্লাবিত হয়। কিন্তু বাঁধটি এত তাড়াতাড়ি ভেঙে যাবে, এটা তাঁরা চিন্তাও করেননি। ভাঙনকবলিত স্থানগুলো শক্তিশালীভাবে মেরামত করতে হবে। শুধু বালুর বস্তা ফেললেই হবে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি গ্রামের বিস্তীর্ণ জনপদ রক্ষায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। ২০১৬ সালে দেওয়ানগঞ্জের ফুটানি বাজার থেকে ইসলামপুরের কুলকান্দি গ্রাম পর্যন্ত সাড়ে ৮ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এটি নির্মাণে ২২০ কোটি টাকা ব্যয় হয়। ২০১৬ সালের জুনে বাঁধটি নির্মাণের কাজ শেষ হয়। এতে নদীভাঙন ও বন্যার হাত থেকে অনেকটাই মুক্তি পেয়েছিল গ্রামবাসী।

জানতে চাইলে পাউবোর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাইদ বলেন, যমুনার পানি বাড়তে শুরু করেছে। মুরাদাবাদ এলাকায় পানির তীব্র স্রোত রয়েছে। স্রোতে বাঁধের ৪টি স্থানে প্রায় ২০০ মিটার ধসে গেছে। ভাঙা অংশে জরুরি ভিত্তিতে মেরামতকাজ শুরু হয়েছে। সেখানে যাতে আর না ভাঙে, তার সব ধরনের ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হচ্ছে। গ্রামবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই।