যশোরের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে আবারও বন্দীর আত্মহত্যার চেষ্টা

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র
ফাইল ছবি

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের বন্দী এক কিশোর (১৬) আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। আজ শনিবার দুপুরে ওই কিশোর নিজ কক্ষে কাপড় ধোয়ার গুঁড়া সাবান খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর আগে গত এক বছরে এই শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের অন্তত সাত শিশু আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।

ওই কিশোরের বাড়ি যশোর শহরের পুরোনো কসবা এলাকায়। একটি হত্যা মামলায় গত জুন মাসে ওই কিশোরকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিজেদের কাপড় ধোয়ার জন্য কেন্দ্র থেকে বন্দী শিশুদের ডিটারজেন্ট পাউডার দেওয়া হয়। শনিবার দুপুরে এক বন্দী কিশোর ওই পাউডার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে কেন্দ্রের কর্মকর্তারা তাকে গাড়িতে করে চিকিৎসার জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। চিকিৎসকেরা তাকে ভর্তি করে চিকিৎসা দিচ্ছেন।

এর আগে গত এক বছরে এই শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের অন্তত সাত শিশু আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, দাপ্তরিক কাজে তিনি কেন্দ্রের বাইরে ছিলেন। হঠাৎ খবর আসে বন্দী এক কিশোর কাপড় ধোয়ার পাউডার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাৎক্ষণিক কেন্দ্রের গাড়িতে করে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। কেন কী কারণে সে ডিটারজেন্ট পাউডার খেয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। সুস্থ হওয়ার পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আত্মহত্যার উদ্দেশ্যেই কিশোরটি ডিটারজেন্ট পাউডার খেয়েছে। এর আগেও সে একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে বলে জানা গেছে।

এই কেন্দ্রের অন্য এক বন্দী কিশোর (১৫) গত ২০ অক্টোবর জানালার গ্রিলের সঙ্গে গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই কিশোরের বাড়ি পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায়। আত্মহত্যার সময়ে অন্য বন্দী কিশোরেরা টের পেয়ে তাকে উদ্ধার করে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে। পরে তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই মাসেই শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে আরও দুই বন্দী কিশোর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

বিভিন্ন ধরনের অপরাধের মামলায় আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে কেন্দ্রে পাঠানো হয়। অনেকের পরিবারের সদস্যরা তাদের সঙ্গে ঠিকমতো যোগাযোগ রাখেন না। মামলায় জামিনও হয় না। এসব কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে একসময় তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
জাকির হোসেন, সহকারী পরিচালক, যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র

কেন্দ্রের শিশুরা আত্মহত্যায় ঝুঁকছে কেন প্রশ্নে কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, বিভিন্ন ধরনের অপরাধের মামলায় আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে কেন্দ্রে পাঠানো হয়। অনেকের পরিবারের সদস্যরা তাদের সঙ্গে ঠিকমতো যোগাযোগ রাখেন না। মামলায় জামিনও হয় না। এসব কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে একসময় তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। তাদেরকে কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। তারপরও আত্মহত্যার প্রবণতা তাদের মধ্যে থেকেই যাচ্ছে।

জাকির হোসেন জানান, গত এক বছরে সাতজন শিশু আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। এদের মধ্যে হত্যা মামলার আসামিই বেশি।