যশোরে শিশু তৃষাকে ধর্ষণের পর হত্যা মামলার সব আসামি খালাস

আদালত
প্রতীকী ছবি

যশোরে শিশু আফরিন তৃষাকে (৮) ধর্ষণের পর হত্যা মামলার সব আসামি খালাস পেলেন। গতকাল সোমবার যশোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক টি এম মুসা এই রায় দিয়েছেন।

আদালত ও আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, ইজিবাইকের চালক তরিকুল ইসলাম যশোর শহরের খোলাডাঙ্গা এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। তাঁর শিশুকন্যা আফরিন তৃষা কারবালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করত। ২০১৯ সালের ৩ মার্চ বিকেলে বাড়ির পাশে গির্জার মাঠে খেলতে যায় তৃষা। সন্ধ্যার পরও তৃষা বাড়ি না ফেরায় স্বজনেরা খোঁজাখুঁজি করে তাকে উদ্ধার করতে পারেননি। পরের দিন তৃষার বাবা কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ওই দিন বিকেলে স্থানীয় প্রফুল্ল নামে এক ব্যক্তির বাড়ির পাশে মাটি খোঁড়া দেখে সবার সন্দেহ হয়। এরপর সেখানকার মাটি সারিয়ে তৃষার বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করা হয়। তৃষার বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলার তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, হত্যা ও ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সাইফুল ইসলামকে আটক করা হয়। তিনি ওই এলাকার আবদুল আওয়ালের ছেলে। ওই সময় সাইফুল শিশু তৃষাকে হত্যা ও ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন।

এরপর এই ঘটনার প্রধান সন্দেহভাজন শামীমকে পুলিশ আটক করতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলিতে শামীম নিহত হন। শামীমকে মাদক সেবনে বাধা এবং ইজিবাইকে ওঠা নিয়ে তৃষার বাবার সঙ্গে বিরোধের জেরে এই ঘটনা ঘটে বলে তদন্তে বের হয়ে আসে।

তদন্ত শেষে আটক আসামিদের দেওয়া তথ্য ও সাক্ষীদের বক্তব্যে ধর্ষণের পর হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকায় মেহেদী হাসান ও সাইফুলকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়ার সময় অভিযুক্ত আসামি মেহেদী হাসান পলাতক থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। এই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত শামীম গত বছরের ৬ মার্চ বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়ার কারণে অভিযোগপত্র থেকে তাঁর অব্যাহতির আবেদন করা হয়। পরে মেহেদী আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন।

মামলায় সরকারপক্ষের আইনজীবী যশোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের (বিশেষ পিপি) সেতারা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, রায়ে আটক আসামি মেহেদী হাসান ও সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ায় বিচারক তাঁদের এই মামলা থেকে খালাস দেন। খালাসপ্রাপ্ত মেহেদী হাসান খোলাডাঙ্গা গাজীপাড়ার কামরুজ্জামানের ছেলে ও সাইফুল ইসলাম একই এলাকার আবদুল আওয়ালের ছেলে।

এদিকে রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে মামলার বাদী নিহত তৃষার বাবা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘রায়ে আমি অসন্তুষ্ট। উচ্চ আদালতে আপিল করব।’