যশোরে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৭২ করোনা রোগী

করোনাভাইরাস
প্রতীকী ছবি

যশোর জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজন মারা গেছেন। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় যশোর ও নওয়াপাড়া পৌরসভায় বিধিনিষেধ আরোপ করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। আজ বুধবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে এই বিধিনিষেধ কার্যকরের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

যশোর জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে (রেড জোন) নারী ও পুরুষের দুটি ওয়ার্ডে ৮০টি শয্যা রয়েছে। সেখানে ৭২ জন করোনা রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে বেনাপোল ইমিগ্রেশন দিয়ে আসা ভারতফেরত যাত্রী আছেন ২৫ জন। আজ ভর্তি ছিলেন ৫৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তবে সুস্থ হয়ে কেউ বাড়িতে ফিরে যাননি। ফলে বর্তমানে ৭২ জন ভর্তি আছেন। এ ছাড়া হাসপাতালের আইসোলেশন (ইয়েলো জোন) ওয়ার্ডে ২২ জন ভর্তি আছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় দুজন পুরুষ রোগী করোনায় মারা গেছেন।

করোনা ইউনিটে আর মাত্র ৮টি শয্যা খালি আছে। এদিকে প্রতিদিনই ১০ থেকে ১৫ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। সে কারণে এই হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। করোনার রোগী আরও বাড়লে কতটা প্রস্তুতি আছে, এ প্রশ্নের জবাবে যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘করোনা রেড জোনে এখনো আটটি শয্যা খালি আছে। আরও ২৪টি শয্যা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে ২৪ শয্যার আরেকটি ওয়ার্ড করোনা ইউনিটে সংযোজন করা হবে।’

যশোর জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আর মাত্র ৮টি শয্যা খালি আছে। এদিকে প্রতিদিনই ১০ থেকে ১৫ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন।

করোনা রোগীদের চিকিৎসাসামগ্রী ও অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, আইসিইউ ইউনিটে তিনটি শয্যা রয়েছে। একই সঙ্গে তিনজন রোগী থাকলে অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হলেও এখনো অক্সিজেন সরবরাহ করা শুরু হয়নি। তা ছাড়া এই ইউনিট ব্যবস্থাপনার মতো কোনো জনবল নেই। এদিকে এই ইউনিটে থাকা এক রোগী ও ইয়েলো জোনে থাকা একজনসহ মোট দুজন রোগী ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন।

এদিকে আজ দুপুরে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টার ল্যাব থেকে ২৪ ঘণ্টার করোনা পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, যশোর জেলায় ২৭৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১০৩ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।

জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তমিজুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জেলায় করোনা শনাক্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৯ জুন দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ১৬ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত ৭ দিন যশোর ও নওয়াপাড়া পৌরসভায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো।

এ সময় দুটি পৌর এলাকায় গণপরিবহন বা বাস চলাচল করতে পারবে না। যশোর-ঝিকরগাছা, বেনাপোল ও যশোর-নওয়াপাড়া-অভয়নগর এই দুই রুটে গণপরিবহন বা বাসচলাচল বন্ধ থাকবে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গণমাধ্যম, পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, কৃষিপণ্য, সার-কীটনাশক, ফায়ার সার্ভিস, স্থলবন্দরের কার্যক্রম, ডাকসেবাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের যানবাহন বিধিনিষেধের আওতামুক্ত থাকবে।

কাঁচাবাজার, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য (মুদিখানা) ও ওষুধের দোকান ব্যতীত সব ধরনের দোকানপাট, শপিংমল, বিপণিবিতান বন্ধ থাকবে। হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি বা সরবরাহ করতে পারবে। মোটরসাইকেলে চালক ছাড়া কেউ চড়তে পারবেন না। রিকশায় একজন ও ইজিবাইকে দুজনের বেশি যাত্রী চলাচল করতে পারবেন না। বিশেষ প্রয়োজনে যাঁরা চলাচল করবেন, তাঁদের মাস্ক পরিধান করতে হবে। পর্যটনকেন্দ্র, পার্ক, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে।