যাঁরা জনপ্রিয় ছিলেন, তাঁদের তো আমরা মনোনয়ন দিতে পারিনি

এম এনামুল কবির


তৃতীয় ধাপের ভোটে সুনামগঞ্জ সদর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন মাত্র দুটিতে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নয়টির মধ্যে একটিতেও জয় পায়নি আওয়ামী লীগ। নৌকার চার প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। নৌকার এমন বিপর্যয় নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এনামুল কবিরের সঙ্গে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: জেলা সদরে নৌকার কেন এমন পরাজয়?

এনামুল কবির: কারণ একাধিক। জেলা সদরের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দীর্ঘদিনের একটা হতাশা আছে। আছে নেতৃত্বের দুর্বলতা। সদর উপজেলা কমিটি ২২ বছরের পুরোনো। দল ক্ষমতায়, কিন্তু নেতা-কর্মীরা এখানে কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত নন।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশার কারণ কী?

এনামুল কবির: একটি জেলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা হয় জেলা সদর থেকে। একইভাবে প্রশাসনিক কার্যক্রমের কেন্দ্রও জেলা সদর। কিন্তু এখানে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দলের কোনো এমপি নেই। সদর উপজেলা পরিষদে শুরু থেকেই বিএনপির চেয়ারম্যান ছিলেন। এবার আমাদের একজন হয়েছেন। তাই এখানে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। আবার যেসব কাজ হচ্ছে, তার সঙ্গে আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বিষয়টি নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশার পাশাপাশি ক্ষোভও আছে। নানা কারণে এখানে সংগঠন শক্তিশালী হয়ে ওঠেনি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: প্রার্থী মনোনয়নে কি ভুল আছে?

এনামুল কবির: তৃণমূল থেকে তালিকা এলে জেলা কমিটির পক্ষ থেকে আমরা সেটি কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডে পাঠাই। কিন্তু দেখা গেছে, তৃণমূল থেকে নাম আসেনি, আমরাও নাম দিইনি; কিন্তু কেন্দ্র থেকে অন্য একজনকে মনোনয়ন দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সদরে কয়েকটি ইউপিতে এ রকম ঘটছে। অজনপ্রিয় ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়ার পর আমরা সুরমা, গৌরারং ও জাহাঙ্গীরনগর ইউপিতে প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য লিখিতভাবে কেন্দ্রে জানিয়েছিলাম। কিন্তু ফল হয়নি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: প্রার্থীদের পরাজয়ে নেতাদের কোন্দল কতটুকু দায়ী?

এনামুল কবির: দলে অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিডদের নিয়ে আমরা সব সময়ই চিন্তিত। তাঁদের সঙ্গে এখনো বিএনপি-জামায়াতের সখ্য আছে। তলেতলে তাঁরা নৌকাবিরোধী। তবে নেতাদের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার প্রয়োজন ছিল। জেলা সদরে যাঁরা আমাদের দলের জনপ্রতিনিধি আছেন, তাঁরা নিজেদের ভোটের স্বার্থে মাঠে নৌকার প্রার্থীদের পক্ষে যেভাবে ভূমিকা রাখার কথা ছিল, সেটা করেননি। আমি নেতা-কর্মীদের নিয়ে যেটুকু পেরেছি, চেষ্টা করেছি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: এই বিপর্যয়ের পর দলের আগামী দিনের পরিকল্পনা কী?

এনামুল কবির: এখানে কিন্তু নৌকার ভোট কমেনি, বরং বেড়েছে। ঝামেলাটা হয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে। প্রতিটি ইউপিতেই এটা ছিল। এর সঙ্গে বিএনপি, জাপার প্রার্থীরাও ছিলেন। বিদ্রোহীদের অনেকেই দলের কোনো পদে না থাকায় আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারিনি। আবার এটাও সত্য, যাঁরা জনপ্রিয় ছিলেন, তাঁদের তো আমরা মনোনয়ন দিতে পারিনি। এ রকম দুজন বিদ্রোহী কিন্তু জয়ী হয়েছেন।

বিদ্রোহীদের ভোট যোগ করলে বেশির ভাগ ইউপিতেই নৌকার প্রার্থী জয়ী হওয়ার কথা। এখানে দলকে শক্তিশালী ও সংগঠিত করার কোনো বিকল্প নেই। এখন যে দোষারোপ চলছে, সেটা বন্ধ করতে হবে। শুধু জেলাতে নয়, সুনামগঞ্জ সদর নিয়ে কেন্দ্র থেকেও ভাবতে হবে। আমরা ভবিষ্যতে অবশ্যই ভালো করব।