যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে এসে ফিরে যাচ্ছেন যাত্রীরা

বরগুনা যাওয়ার জন্য সভারের জিরাবো থেকে ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সন্তানকে নিয়ে এসেছেন তাসলিমা বেগম। কিন্তু লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় তিনি ফিরে যান। আজ মঙ্গলবার বিকেলে।
ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা থেকে সারা দেশে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আজ মঙ্গলবার ভোর ছয়টা থেকে এ নিষেধাজ্ঞা শুরু হলেও দক্ষিণাঞ্চলের অনেক যাত্রী বিষয়টি জানেন না। এ কারণে তাঁরা সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে এসে ফিরে গেছেন।

মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কিছু যাত্রী লঞ্চ না পেয়ে টার্মিনাল থেকে ফিরে যাচ্ছেন। বেশ কিছু লঞ্চ সরিয়ে অন্যত্র নোঙর করা হয়েছে।

সাভারের জিরাবো থেকে আসা তাসলিমা বেগম জানান, ‘আমি বরগুনা যাব। বেলা একটার দিকে টার্মিনালে এসে শুনি লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। লঞ্চ চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। তাই গন্তব্যে যেতে না পেরে বাসায় ফিরে যাচ্ছি।’

সাভার থেকে আসা আরেক যাত্রী সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ যাওয়ার উদ্দেশে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পরিবার নিয়ে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে এসেছি। লঞ্চঘাটের লোকজনের কাছ থেকে জানতে পারি, আজ (মঙ্গলবার) থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ। লালকুঠি ঘাট এলাকায় মাইক্রোবাসে চাঁদপুর যাওয়ার জন্য চালক ডাকছেন। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ যেতে জনপ্রতি ৮০০ টাকা ভাড়া দাবি করা হচ্ছে। ছেলেমেয়েসহ চারজনের ৩ হাজার ২০০ টাকা ভাড়া চেয়েছে। কোনো উপায় না পেয়ে ২ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে চাঁদপুরে রওনা হচ্ছি।’

ঢাকা নদীবন্দর সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার উদ্দেশে ৮১টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। আজ ভোর ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বন্দরে ৪৯টি লঞ্চ এসেছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থার ঢাকা নদীবন্দরের প্রচার সম্পাদক ও সালাউদ্দিন গাজী লঞ্চের মালিক বাবু গাজী বলেন, করোনার কারণে ঢাকাসহ সারা দেশে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় ভোলা ও শরীয়তপুর রুটে তাঁর দুটি লঞ্চ যাওয়ার কথা ছিল। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেগুলোও বন্ধ রাখা হবে।

সারা দেশে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় কর্মচারীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। মঙ্গলবার বিকেল তিনটার দিকে মেসার্স সালাউদ্দিন গাজী লঞ্চে।
ছবি: প্রথম আলো

নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আজ (মঙ্গলবার) সকাল ছয়টা থেকে ঢাকা নদীবন্দরসহ সারা দেশে যাত্রীবাহী নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক আদেশে ঢাকা-সংলগ্ন জেলা নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জের পাশাপাশি রাজবাড়ী, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জে মঙ্গলবার থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এসব জেলায় সার্বিক কার্যাবলি ও চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ সময় এসব জেলায় বন্ধ থাকবে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল।

মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত লঞ্চ, স্পিডবোট, ট্রলারসহ সব নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে বলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

সোমবার রাত ১১টা ২১ মিনিটে মন্ত্রণালয়ের পাঠানো সংশোধিত জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকার চারপাশের জেলাগুলোসহ যে সাতটি জেলায় লকডাউন দেওয়া হয়েছে, সেই জেলাগুলোর নৌ চলাচলসহ ঢাকা থেকে সারা দেশের নৌ চলাচল বন্ধ থাকবে।