যানবাহনের চাপ নেই, কাজ হারাচ্ছেন ঘাট প্রতিনিধিরা

পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হওয়ায় চাপ কমেছে দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে। রোববার রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে
ছবি: প্রথম আলো

দীর্ঘদিনের চিত্রে খানিকটা বদল এসেছে। আগের মতো ঘাটে গাড়ির দীর্ঘ সারি নেই। ফেরি থাকা সাপেক্ষে যেকোনো ধরনের যানবাহন সরাসরি তাতে উঠে যাচ্ছে। এমন চিত্র এখন রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট এলাকায়।

আজ রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাটে অবস্থান করে দেখা যায়, ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ফাঁকা। টিকিট কাউন্টারের সামনে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা যানবাহনের ঘাট প্রতিনিধিদেরও তেমন ব্যস্ততা নেই। ছিল না পণ্যবাহী গাড়ির দীর্ঘ সারি। ঘাটে আসা যানবাহনের মধ্যে ছিল বরিশাল, খুলনা বা গোপালগঞ্জ জেলার দূরপাল্লার পরিবহন।

খুলনা থেকে আসা যাত্রীবাহী পরিবহন কমফোর্টের চালক মিজানুর রহমান বলেন, তাঁদের পদ্মা সেতু দিয়ে যাওয়ার এখনো কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া এই পরিবহনের অনেক যাত্রী সাভার বা নবীনগর এলাকার। একটু সময় বেশি লাগলেও এ রুট দিয়েই তাঁদের যাতায়াত করতে হয়।

একই পরিবহনের দৌলতদিয়া ঘাট প্রতিনিধি সেলিম রেজা বলেন, আগে ২৪ ঘণ্টায় ২৬টি ট্রিপ আসা–যাওয়া করত। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় কিছুটা কমেছে। সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাঁদের পরিবহনের মাত্র ৩টি ট্রিপ পেয়েছেন। বাকি গাড়ি পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা গেছে।

এদিকে ঘাট অনেকটা ফাঁকা থাকায় অধিকাংশ পরিবহনের নিয়োজিত প্রতিনিধিরা বেকার হয়ে পড়ছেন। গ্রিন লাইন নামক বাসের দৌলতদিয়া ঘাট প্রতিনিধি নুরুজ্জামান মিয়া বলেন, তাঁদের কোম্পানির বাসের সংখ্যা এমনিতেই কম। এরপরও সরাসরি যাতায়াতের সুবিধার্থে দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন তাঁর মতো অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছেন।

এদিকে ঘাটে যানবাহনের সংখ্যা কমে যাওয়ায় স্থানীয় দালালদের তৎপরতাও বেড়েছে। যেকোনো পণ্যবাহী বা সাধারণ পরিবহন দেখলেই সেটিকে দ্রুত ফেরিতে তুলে দেওয়ার কথা বলে চালকের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করছেন।

বেলা পৌনে ১টার দিকে ৫ নম্বর ঘাটে একটি খননযন্ত্রবাহী ট্রাক ফেরিতে উঠতে ঘাটে পৌঁছালে কয়েকজন দালাল ঘিরে ধরেন। এ সময় চালকের কাছে ফেরির টিকিটের বাইরে অতিরিক্ত আরও কয়েক হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় চালকের সঙ্গে তর্কে জড়ান দালালেরা।

খুলনা থেকে আসা খননযন্ত্রবাহী ওই ট্রাকের চালক কুরবান আলী বলেন, ৩ জন দালাল টিকিট কেটে দেওয়ার কথা বলে ১ হাজার ৭৫০ টাকার পরিবর্তে ২ হাজার ৫০০ টাকা দাবি করেন। সেই টাকা দেওয়ার পর আরও আড়াই হাজার টাকা দাবি করেন। না দেওয়ায় গালাগালি করতে থাকেন। পরে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ১ হাজার ৫০০ টাকা দিলেও গালমন্দ করেন।

ঘাটে কর্তব্যরত ট্রাফিক বিভাগের এটিএসআই ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, ঘাটে যানবাহনের চাপ কমে যাওয়ায় সবার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এসব শ্রমজীবী মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থানের চিন্তা করতে হবে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ বলেন, সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ৮ ঘণ্টায় দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে ১৮১টি বাস, ২৯১টি ট্রাক, ২০৭টি ঢাকামুখী ছোট গাড়ি নদী পাড়ি দেয়। পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে ৮ ঘণ্টায় ১৫৪টি বাস, ২৪০টি ট্রাক ও ২৯৯টি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী ছোট গাড়ি নদী পাড়ি দেয়। এক সপ্তাহ পর পদ্মা সেতুর প্রভাবের চিত্রটি পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে।