যৌতুকের জন্য গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ, স্বামী-শ্বশুর কারাগারে

নিহত গৃহবধূ শিল্পী রানী দাস
ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীর পলাশে বিয়ের দেড় মাসের মাথায় যৌতুকের জন্য শিল্পী রানী দাস (১৯) নামের এক গৃহবধূকে শ্বাস রোধ করে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের জিনারদী গ্রামে এ ঘটনায় ওই গৃহবধূর স্বামী ও শ্বশুরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার দুজন হলেন নিহত ওই নববধূর স্বামী শ্যামল দাস (২৫) ও তাঁর বাবা বিমল দাস (৪৫)। তাঁদের বাড়ি জিনারদীতে। তারা দুজনেই পেশায় নরসুন্দর এবং জিনারদী বাজারে একটি সেলুন চালান। আজ মঙ্গলবার বিকেলে তাঁদের নরসিংদীর আদালতে তোলা হলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শেখ সাদী জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।

নিহত নববধূ শিল্পী রানী দাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার প্রদীপ চন্দ্র দাসের মেয়ে। হত্যার ঘটনায় গতকাল বিকেলেই শুভ চন্দ্র দাস বাদী হয়ে শিল্পীর স্বামী ও শ্বশুরকে আসামি করে পলাশ থানায় মামলা করেন। পরে ওই রাতেই অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

নিহত শিল্পীর পরিবারের লোকজন ও স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, দেড় মাস আগে (২১ ফেব্রুয়ারি) শ্যামল চন্দ্র দাসের সঙ্গে শিল্পী রানী দাসের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় ছেলের পরিবারকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা নগদ ও ১ ভরি স্বর্ণালংকার যৌতুক দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মেয়ের পরিবার বিয়ের আগের দিন ছেলেপক্ষকে নগদ এক লাখ টাকা ও আধা ভরি স্বর্ণালংকার দেন। যৌতুকের বাকি আধা ভরি স্বর্ণালংকার ও ১০ হাজার টাকা পরে দেওয়ার কথা হয়।

কিন্তু বিয়ের এক সপ্তাহ পর থেকেই যৌতুকের বাকি টাকা ও স্বর্ণালংকার এনে দিতে শিল্পীর ওপর নির্যাতন শুরু হয়। সহ্য করতে না পেরে শিল্পী তাঁর বাবার বাড়িতে একাধিকবার ফোন করেন। প্রতিবারই তিনি যৌতুকের বাকি টাকা ও স্বর্ণালংকার দ্রুত তাঁদের দিয়ে দিতে অনুরোধ করেন। এর মধ্যেই এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটল।

খবর পেয়ে পলাশ থানার পুলিশ ওই বাড়ি থেকে শিল্পী রানী দাসের মরদেহ উদ্ধার করে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

মামলার বাদী ও নিহত গৃহবধূর ভাই শুভ চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমরা বাকি টাকা ও স্বর্ণালংকার পরিশোধ করার জন্য ছেলের পরিবারের কাছে ছয় মাসের সময় চেয়েছিলাম। তারা আমার বোনকে মাত্র ১০ হাজার টাকা ও আধা ভরি স্বর্ণের জন্য নানাভাবে নির্যাতন ও শ্বাস রোধ করে মেরে ফেলল। আমার বোনকে যারা হত্যা করেছে, আমি তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’

পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. নাসির উদ্দীন বলেন, নিহত শিল্পী রানী দাসের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত স্বামী ও শ্বশুরকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতের বিচারক তাঁদের জেলহাজতে পাঠিয়েছেন।